মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশ। দেশের অর্ধেক অংশে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল গতকাল শনিবার। এর আগের দিন শুক্রবার তাপমাত্রা নেমেছিল ৬.১ ডিগ্রিতে। তবে আগামী বুধবার থেকেই নি¤œ তাপমাত্রার উন্নতি হবে এবং শুক্রবার থেকে শুরু হতে পারে বৃষ্টি। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে একটি শক্তিশালী জেটস্ট্রিম (প্রবল গতি সম্পন্ন হিম হাওয়া) বয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে সৃষ্টি হতে পারে একটি স্থল নি¤œচাপ এবং তখনই আকাশে কিছু মেঘ জমবে, যা থেকে আগামী শুক্র ও শনিবার সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস গতকাল জানিয়েছে, দেশের অর্ধেক অংশে অর্থাৎ ৩২ জেলায় বর্তমানে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা অসহনীয় হয়ে উঠলেও আজ দিনে তাপমাত্রার সামান্য উন্নতি হতে পারে। আজ রাজশাহী বিভাগের আট জেলা, রংপুর বিভাগের আট জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা, সিলেট বিভাগের চার জেলা এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জে; চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী; খুলনা বিভাগের যশোর, কৃষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং বরিশাল বিভাগের বরিশালে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
গতকাল শনিবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে কুতুবদিয়ায় ২৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ২১.৬ ও ১২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উপমহাদেশে উচ্চচাপ বলয়ের যে বর্ধিতাংশের জন্য শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় তা ভারতের পশ্চিবঙ্গ অঞ্চল অতিক্রম করে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ঠাণ্ডা বায়ুপ্রবাহটি আকাশে জেটস্ট্রিম হিসেবে প্রবল গতিতে বয়ে যাচ্ছে। আজ রোববার দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জেটস্ট্রিমটি বাংলাদেশের স্থলভাগে কাছাকাছি নেমে যাবে এবং এটা হবে এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী জেটস্ট্রিম। জেটস্ট্রিমের কারণে ভূপৃষ্ঠে স্থল নি¤œচাপের সৃষ্টি হবে। ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরের পর থেকে স্থল নি¤œচাপটির প্রভাবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। বৃষ্টিপাতের মূল অংশটি রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। শুক্রবার রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাবে। শনিবার সকালের আগে-পরে চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে শুক্র ও শনিবার ৪০ থেকে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে ১০ থেকে ৩০ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে ১০ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে বলে মোস্তফা কামাল কয়েকটি আন্তর্জাতিক মডেল পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন।
দিনাজপুরে নামছে তাপমাত্রার পারদ : বাড়ছে শীতের দাপট
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, মাঘের মাঝামাঝিতে ক্রমেই নামছে তাপমাত্রার পারদ। আর বাড়ছে শীতের দাপট। হাঁড় কাঁপানো শীত দিনাজপুরসহ উত্তর জনপদের মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। সকালে ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় কনকনে শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রান্তিক জনপদের শীতার্ত মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার পর কিছু সময়ের জন্য আকাশে সূর্য দেখা মেলে। তবে রোদের তেমন তেজ না থাকায় হিমেল হাওয়ায় সাথে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়াও বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ ও গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার। তবে বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার গতিতে ধাবিত হতে পারে। তিনি জানান, উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৭ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ দেশের আরো বেশ কিছু স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
দিনাজপুরের পাশাপাশি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রামসহ ওই অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায়ও পড়ছে হাড় কাঁপানো শীত। উত্তরাঞ্চলের এসব এলাকার তাপমাত্রা আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গতকাল শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পঞ্চগড়ে ৭.০, সৈয়দপুরে ৮.০, রংপুরে ৯.২, ডিমলায় ৮.৯, নওগাঁয় ৮.০, রাজশাহীতে ৮.৯, চুয়াডাঙ্গায় ৯.০ এবং শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়। ভোর থেকে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে এ অঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ। কুয়াশা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। শীতার্ত এলাকাগুলোর ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশা লাঘবে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণতৎপরতা চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। এ তৎপরতা আরো জোরদার করা হলে শীতকবলিত মানুষ কিছু স্বস্তি পেতে পারে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত