বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক তুলে নেয়া এক বাংলাদেশি বোলার আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছেন তার একটি ফেসবুক কমেন্ট নিয়ে।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বোলার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী শনিবারই প্রথম বিপিএলের একটি ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন। আর প্রথম দিনেই তিনি পরপর তিনটি বলে তুলে নেন সিলেট সিক্সার্সের তিন ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও রাভি বোপারার উইকেট। তার এই হ্যাটট্রিকই ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের মোড়।
এটা এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের প্রথম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মোট ছয়টি হ্যাটট্রিক হয়েছে।
১৮তম ওভারে প্রথম দুই বলে এনামুল হক বিজয় ছয় ও চার মেরে দশ রান নেয়ার পর প্রথমে এনামুল ও পরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তৃতীয় বলে ইংল্যান্ডের রাভি বোপারাকে ইয়র্কার বলে ক্লিন বোল্ড করে উল্লাসে মাতেন মৃত্যুঞ্জয়।
এই তিনজনের মধ্যে এনামুল হক বিজয় ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান, তিনি আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৭৮ রানব তোলেন। প্রথম বাংলাদেশ প্রিমিয়াল লিগ ম্যাচ খেলতে নামা মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাটট্রিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নির্ভার হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত বিপিএলের সেরা দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সই।
একুশ বছরের দোরগোড়ায় থাকা এই ফাস্ট বোলার অবশ্য এর আগে ৫টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। মূলত খেলতেন বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে।
শনিবারের হ্যাটট্রিকের পর বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে ‘যোদ্ধা’ আখ্যা দেন।
সেখানে মন্তব্যের ঘরে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় লেখেন, “যে দেশে মাশরাফি ভাই এর মত যোদ্ধা আছে। সে দেশে আমার যুদ্ধ অতি তুচ্ছ।” তার এই কমেন্ট নিয়েই ফেসবুকে হচ্ছে তুমুল আলোচনা।
কমেন্টটিতে এই প্রতিবেদন লেখার পর্যন্ত তের হাজারের উপর প্রতিক্রিয়া পড়েছে। প্রত্যুত্তর এসেছে বহু। অনেকেই কমেন্টটির স্ক্রিনশট নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করছেন।
যেভাবে ক্রিকেট এলেন
মৃত্যুঞ্জয়ের জন্ম সাতক্ষীরায়, ২০১০ সালে পরিবারসহ ঢাকায় আসার দুই বছর পর তিনি আবাহনীর মাঠে ক্রিকেট কোচিংয়ে ভর্তি হন, সেখান থেকেই পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা।
দুই হাজার আঠারো সালে মৃত্যুঞ্জয় অনূর্ধ্ব ১৭ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে ভারত সফরে যান।
এরপর ইংল্যান্ডে অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ের একটি ত্রিদেশীয় সিরিজেও নজর কাড়েন গতি আর সুইং দিয়ে।
দুই হাজার বিশ সালে বাংলাদেশের যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন তিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেবার যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ।
মাশরাফির সাথে তুলনা কেন?
বাংলাদেশে তরুণ ফাস্ট বোলারদের কথা এলেই হরহামেশা মাশরাফি বিন মুর্তজার সাথে তুলনা হয়, বল হাতে মাঠে দাপট কিংবা পরিসংখ্যান সব বিচারেই মাশরাফী বাংলাদেশের টপ ফাস্ট বোলার, তাই অনেক ফাস্ট বোলারের আইডলও তিনিই।
তাসকিন আহমেদ কখনো লুকোননি যে তিনি মাশরাফীর অন্ধভক্ত, মৃত্যুঞ্জয়ও খোলামেলা বললেন মাশরাফিই তার নায়ক।
তবে তিনি মাশরাফির সাথে তুলনা উড়িয়ে দিলেন। তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে মাশরাফি ভাইকে খুব ভালো লাগে। তিনি এখনও এই বয়সে যেই ডেডিকেশন দেখাচ্ছেন, আমরা নিজেরাই এতো ডেডিকেশন দিতে পারবো, এটা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ একটি বিষয়। তার ডেডিকেশন, তার খেলার প্রতি আগ্রহ, তার সাপোর্টিং মনোভাব আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দেয়।”
মাশরাফির সাথে মৃত্যুঞ্জয়ের তুলনাটা আসলে ক্রিকেট সমর্থকরাই করছেন। মাশরাফির ক্যারিয়ারে বড় একটা সময় ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন, ছয়বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে তার, যে কারণে টেস্ট ফরম্যাট থেকে অল্প দিনেই দূরে সরে যেতে হয়েছিল।
মুত্যুঞ্জয়ও ছোট ক্যারিয়ারে দুইবার ইনজুরির কবলে পড়েছেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়।
এরপর চোট ও কোভিড মিলিয়ে তেমন মাঠে নামা হয়নি তার, প্রায় দুই বছর পরে এসে তিনি বোলিং দিয়েই আলোচনায় এলেন বিপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে।
মৃত্যুঞ্জয় বলেন, “আমি যেহেতু ইনজুরিতে ছিলাম, তাই তাকে (মাশরাফীকে) দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশের অনেক পেস বোলাররাই তাকে দেখে অনুপ্রেরণা পায়। সে বাংলাদেশে আমার একজন আইডল বলা যায়।”
শনিবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ১৬ রানের জয় পেয়েছে, মৃত্যুঞ্জয় ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন