আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক চিরকালই আদায়-কাঁচকলায়। কূটনীতিতে একটা চালু নিয়ম রয়েছে। শত্রুর শত্রুকে এখানে বন্ধু বলেই ভাবা হয়। সেই তত্ত্বকে ভিত্তি করেই হোক, কিংবা অন্য কোনো স্বার্থেই হোক, রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে আগাগোড়া ইউক্রেনের পাশে থাকারই বার্তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। অথচ এবার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য সেই ‘বন্ধু’ আমেরিকাকেই কিনা দুষলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জিলেনস্কি। তার মন্তব্য, আমেরিকা অযথা যুদ্ধের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ফলে ভেঙে পড়ছে ইউক্রেনের অর্থনীতি। বলাই বাহুল্য, ওয়াশিংটনকে কাঠগড়ায় তুলে অভিযোগ প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জিলেনস্কির।
ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্রগুলো। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মনে করছেন বাড়াবাড়ি রকমের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দেশগুলো, যা উল্টো ইউক্রেনকেই ঠেলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর অব্যাহত চাপ তৈরি করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা, অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি, সেই সঙ্গে ইউক্রেনে হামলা করলে তার পাল্টা জবাব দেওয়ার কথাও বলছে বাইডেন প্রশাসন। তবে রাশিয়া বরাবরের মতোই দাবি করে আসছে যুদ্ধের কোনো পরিকল্পনাই তাদের নেই। প্রথমবারের মতো রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেও সেই আশ্বাস দিয়েছেন।
পূর্ব ইউরোপে সৈন্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : বাইডেন শুক্রবার পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সেনা পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্ব ইউরোপ ও ন্যাটো দেশগুলোতে সামনের দিনে সৈন্য পাঠাব আমি। খুব বেশি নয়।’ চলতি সপ্তাহে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবিও এমন আভাস দেন। তিনি জানান, ন্যাটো বাহিনীকে সহায়তার জন্য সাড়ে আট হাজার সেনাকে ‘উচ্চ সতর্ক’ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে যাতে প্রতিবেশী ন্যাটো দেশগুলো থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় তার প্রস্তুতিই আগেভাগে সেরে নিতে চাইছে ওয়াশিংটন। এ জন্য এই অঞ্চলে সৈন্য বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা গত সপ্তাহেও জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাইডেন বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে পোল্যান্ড, রোমানিয়া ইত্যাদি দেশে সৈন্য উপস্থিতি বাড়াতে যাচ্ছি, তারা ন্যাটোর সদস্য।’ এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দাবি করেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া এমন পর্যায়ে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে তাতে পুতিন চাইলেই দেশটিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
যুদ্ধের পরিকল্পনা নেই- পুতিন : ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য পদ দেওয়া হবে না, যুক্তরাষ্ট্রসহ জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে এমন নিশ্চয়তা চায় রাশিয়া। তবে সাম্প্রতিক আলোচনায় এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এমন বাস্তবতায় রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে যুদ্ধের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এই বিষয়ে প্রথমবারের মতো দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো এখনো রাশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত মূল দাবির বিষয়টির কোনো সুরাহা দেয়নি। তবে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান তিনি। ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা নেই বলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ফোনালাপে তিনি জানিয়েছেন।
ভীতি ছড়াবেন না-ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট : রাশিয়া ইউক্রেনে অচিরে হামলা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র এমন আশঙ্কা প্রকাশ করলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তেমনটা মনে করেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অতিমাত্রায় ভীতি ছড়ানোর কারণে ৪ কোটি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ইউক্রেনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ভলোদেমির জেলেনস্কি। বিদেশি গণমাধ্যমের জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের সড়কে কোনো ট্যাংক নেই। কিন্তু গণমাধ্যম এমন ধারণা দিচ্ছে যাতে ইউক্রেনের বাইরে থাকা মানুষের কাছে মনে হবে আমরা যুদ্ধাবস্থায় আছি।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন