খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার আইয়ান জুট মিলের নারীকর্মী মুসলিমা খাতুন (২১)। কাজের ফাঁকে গত ২২শে জানুয়ারি ওই জুটমিলে পাশের দোকানে টিফিন খেতে গিয়েছিলেন। এ সময়
যুগ্নীপাশা পূর্বপাড়ার মোশারফ খন্দকারের ছেলে রিয়াজ খন্দকার (২৬)-এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মুসলিমাকে প্রেমের প্রস্তাবও দেয় রিয়াজ। এরপর মোবাইল নম্বর আদান প্রদান করে উভয়ে। সেদিনের পর থেকে তাদের মধ্যে মুঠোফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে। মুসলিমাকে বিয়ে করে সংসার বাঁধবে বলেও আশ্বাস দেয় রিয়াজ। ২-৩ দিন না যেতেই মুসলিমার বিশ্বাস অর্জন করে কথিত এ প্রেমিক রিয়াজ।
পরিচয়ের ঠিক তিন দিন পর গত ২৫শে জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুসলিমার মুঠোফোনে জরুরি কথা আছে বলে ফোন করে ডেকে নেয় রিয়াজ। মুসলিমা তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর যুগ্নীপাশা পূর্বপাড়ার একটি পরিত্যক্ত ঘরে মুসলিমাকে নিয়ে যায় রিয়াজ। সেখানে পূর্ব থেকেই তার সহযোগী ওই এলাকার শিলন সরদারের ছেলে সোহেল সরদার (২০) উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে মুসলিমাকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে রিয়াজ ও সোহেল। ধর্ষণের পর মুসলিমা বাড়িতে চলে যেতে চাইলে আরও ধর্ষণের পরিকল্পনা করছিল রিয়াজ ও সোহেল। মুসলিমা সেখান থেকে চলে যেতে জোরাজুরি শুরু করে। এ সময় মুসলিমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে তারা। মুসলিমা বিষয়টি বুঝতে পেরে রিয়াজ ও সোহেলকে বলেন ‘আমার বাবা খুব অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে’। তোমরা আমাকে খুন করো না। আমি এ ধর্ষণের কথা কাউকে বলবো না, আমাকে ছেড়ে দাও।
কিন্তু তার সেই অনুরোধটুকুও রাখেনি কথিত প্রেমিক রিয়াজ ও তার সহযোগী সোহেল। ওই ঘর থেকে বের করে নিয়ে অন্ধকার রাস্তায় কিছুদূর হাঁটার পর মুসলিমার ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে রিয়াজ। একপর্যায়ে গলাটিপে ধরে তারা দু’জন। এরপর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা ছাড়াও পাশেই একটি অর্জুন গাছের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের চেষ্টা করে তারা। শরীরের ওজন ধরে রাখতে না পেরে ফের গাছ থেকে নামিয়ে মুসলিমার নিথর দেহটি ঘাড়ে তুলে নেয় দু’জন। পরে একটি ধান ক্ষেতের পাশে নিয়ে রাখে তারা। সেখানে মুসলিমার শরীর থেকে সব কাপড় চোপড় খুলে বিবস্ত্র করা হয়।
কথিত প্রেমিক রিয়াজ কিছুটা দূরে তাদের বাসা থেকে ধারালো বঁটি নিয়ে সেখানে আসে। তখনো মুসলিমার শরীরের কিছু অংশ নড়াচড়া করছিলো। সেখানেই আবারো রিয়াজ ও সোহেল অসহায় মুসলিমার নিথর দেহে পাশবিক নির্যাতন চালায়। অবশেষে তারা মুসলিমার গলায় ধারালো বঁটি চালিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে। এরপর মুসলিমার ওড়না, প্যান্ট ও জামা দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে নিয়ে চলে আসে। আসার পূর্বে পাশের ধান ক্ষেতে মুসলিমার মস্তকবিহীন বিবস্ত্র দেহটি ফেলে রাখে তারা। মুসলিমার মাথাটি তারা কাপড় চোপড় দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ওই এলাকার নির্মাণাধীন একটি পাকা বাড়ির ভেতরের একটি ছোট্ট কক্ষের বালুর নিচে লুকিয়ে রাখে। এভাবেই মুসলিমার ওপরে পাশবিক নির্যাতনের পর খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া দুই অপরাধী র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
মুসলিমা খাতুন দামোদর গ্রামের মো. শহিদুল হকের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. এমদাদুল হক গাজীর কন্যা। সে ফুলতলার আইয়ান জুট মিলের শ্রমিক ছিলেন। ২৬শে জানুয়ারি মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র ফিঙ্গার প্রিন্ট পদ্ধতিতে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। দুই বছর পূর্বে যশোরের প্রেমবাগ এলাকায় জনৈক সাগরের সঙ্গে বিয়ে হলেও পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর সে আইয়ান জুট মিলের শ্রমিকের কাজ নেন। তিন বোনের মধ্যে নিহত মুসলিমা ছিল সবার ছোট। ফুলতলা দামোদর ঋষিপাড়া এলাকায় প্রায় ১০ বছর ধরে ভাড়া থাকলেও তারা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পার্শ্বেখালি গ্রামের বাসিন্দা।
সূত্রঃ মানবজমিন