করোনাভাইরাস সংক্রমণে সর্বোচ্চ মৃত্যু ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের হলেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ ও যুবকশ্রেণি। অধিক আক্রান্তের হারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীরা। আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম ৮৫ বছরের বেশি বয়সীদের। তবে মোট মৃত্যুর প্রায় ২০ ভাগের বয়সই ৮১ বছরের বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ৬১-৭০ বছর বয়সসীমায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যের আলোকে গত মাসের শেষ সপ্তাহের (২৫ জানুয়ারি-৩১ জানুয়ারি) সংক্রমণ ও মৃত্যু পর্যালোচনায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৬৯ জনের দেহে। এর মধ্য থেকে ৭৮ হাজার ৪৩৫ জনের বয়সভিত্তিক সংক্রমণ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ০-৪ বছর বয়সের শিশু সংক্রমিত হয়েছে ১ হাজার ২১ জন (১.৩০ শতাংশ), ৫-১৪ বছর বয়সের শিশু সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ২০৭ জন (২.৮১ শতাংশ), ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণ সংক্রমিত হয়েছে ১১ হাজার ৭৮৬ জন (১৫ শতাংশ), ২৫-৩৪ বছর বয়সী যুবক সংক্রমিত হয়েছে ২৪ হাজার ৩৮৯ জন (৩১.১০ শতাংশ), ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ সংক্রমিত হয়েছে ১৮ হাজার ২৩৯ জন (২৩.২৫ শতাংশ), ৪৫-৫৪ বছর বয়সী মানুষ সংক্রমিত হয়েছে ১০ হাজার ৮১১ জন (১৩.৭৮ শতাংশ), ৫৫-৬৪ বছর বয়সী সংক্রমিত হয়েছে ৫ হাজার ৯০১ জন (৭.৫২ শতাংশ), ৬৫-৭৪ বছর বয়সী সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ৮৮০ জন (৩.৬৭ শতাংশ), ৭৫-৮৪ বছর বয়সী সংক্রমিত হয়েছে ৯১৫ জন (১.১৭ শতাংশ) এবং ৮৪ বছরের বেশি বয়সী মানুষ সংক্রমিত হয়েছে ২৮৬ জন (শূন্য দশমিক৩৬ শতাংশ)। অন্যদিকে এই সাত দিনে মারা গেছে ১৫৬ জন। এর মধ্যে ০-১০ বছর বয়সী ২ জন (১.২৮ শতাংশ), ১১-২০ বছর বয়সী ৭ জন (৪.৪৯ শতাংশ), ২১-৩০ বছর বয়সী ৫ জন (৩.২১ শতাংশ), ৩১-৪০ বছর বয়সী ২ জন (১.২৮ শতাংশ), ৪১-৫০ বছর বয়সী ২০ জন (১২.৮২ শতাংশ), ৫১-৬০ বছর বয়সী ২৪ জন (১৫.৩৮ শতাংশ), ৬১-৭০ বছর বয়সী ৩৫ জন (২২.৪৩ শতাংশ), ৭১-৮০ বছর বয়সী ৩০ জন (১৯.২৩ শতাংশ) ও ৮০ বছরের বেশি বয়সী ৩১ জন (১৯.৮৭ শতাংশ)। সাত দিনে ৫৫ বছরের কম বয়সী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ৪৫৩ জন বা ৮৭.২৭ শতাংশ। ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৮২ জন বা ১২.৭৩ শতাংশ। এই সময়ে শুধু ষাটোর্ধ্ব মানুষই মারা গেছে ৯৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৬১.৫৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট প্রাণ হারিয়েছে ২৮ হাজার ৫২৪ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৮৩৩ জনেরই (৫৫.৫১ শতাংশ) বয়স ৬০ বছরের বেশি। এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তরুণ ও যুবকশ্রেণি বাইরে ঘোরাফেরা বেশি করে। তারা উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ জন্য এই মানুষগুলো সংক্রমিত বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা নানা রোগে আক্রান্ত থাকে। তাই করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। অনেক বয়স্ক মানুষ বাড়ির বাইরে না গিয়েও অন্যদের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে মারা যাচ্ছে। পরিবারের প্রিয়জনকে হারাতে না চাইলে তরুণ ও যুবকদের সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন