ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের সঙ্গে লাগোয়া বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী এটি। এই রাজ্যের রাজধানী কলকাতা। এই শহর সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে, যা জানলে অবাক হবে গোটা বিশ্ব। আসুন জেনে নেওয়া যাক, তেমনই কিছু মজার তথ্য।
ব্রিটিশ শাসনের সময় ১৯১১ সাল পর্যন্ত ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। পরবর্তীতে দিল্লিতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়।
১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইডেন গার্ডেন্সের ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি ভারতের প্রাচীনতম ক্রিকেট মাঠ। ১৯৮৭ সালে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামটির সংস্কারের পরে, ইডেন গার্ডেন্সের দর্শকাসন এক লাখে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সংস্কারের পর তা ৬৮ হাজারে নেমে আসে। নবনির্মিত নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের পর এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম এবং মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ‘ইডেন গার্ডেন্স’।
প্রথম দিকে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালানো হত এই শহরে। ১৯০২ সাল থেকে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। এশিয়ায় প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলে এই শহরেই। কলকাতা শহরের ট্রাম ভারতে প্রাচীনতম পরিবহণ ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি। সংখ্যায় কমেছে তবু এখনও সেবা দিচ্ছে কলকাতার ট্রাম।
সল্টলেক স্টেডিয়াম বা বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম। ২০১১ সালে এর সংস্কারের আগে, এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম, যেখানে এক লাখ ২০ হাজার দর্শকাসন ছিল। বর্তমানে এখানে ৮৫ হাজার দর্শক বসে খেলা দেখতে পারেন।
কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম পরিকল্পিত এবং কার্যকর দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা। ১৯২০ সালের দশকে এটির পরিকল্পনা করা হলেও, এর নির্মাণ শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকে। ভবানীপুর (বর্তমানে নেতাজি ভবন) থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত প্রথম ভূগর্ভস্থ প্রসারিত মেট্রোরেল পথ, ১৯৮৪ সালে খোলা হয়েছিল। এটি ভারতের পঞ্চম-দীর্ঘতম অপারেশনাল মেট্রো নেটওয়ার্ক। এটি দেশটির একমাত্র মেট্রো যা ভারতীয় রেল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
উনিশ শতকের শেষ থেকে প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার রাস্তায় চলে হাতে টানা রিকশা। এই ধরনের রিকশা ভারতের অন্য কোথাও দেখা যাবে না।
জেমস অগাস্টাস হিকির ‘হিকি’স বেঙ্গল গ্যাজেট’ বা ‘অরিজিনাল ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভারটাইজার’ ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। এটি ছিল এশিয়ায় মুদ্রিত প্রথম সংবাদপত্র। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সংবাদপত্রের ছাপাখানা দখল করার আগে ১৭৮০ থেকে ১৭৮২ সালের মধ্যে দু’বছর প্রকাশিত হয়েছিল।
কলকাতা বইমেলা বিশ্বের বৃহত্তম অবাণিজ্যিক বইমেলা। কলকাতা বইমেলা এশিয়ার বৃহত্তম বইমেলা। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা এবং লন্ডন বইমেলার পরে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বইমেলা।
১৮৬২ সালে ক্যালকাটা পোলো ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো ক্লাব। পোলো খেলার জন্ম ভারতের মণিপুরে। এই অঞ্চলে ‘সাগোল কাংজেই’ নামে একটি খেলা প্রচলিত ছিল। এর অপর নাম ছিল ‘কাঞ্জাই-বাজি’ বা ‘পুলু’। মণিপুরের ওই খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ক্যাপ্টেন রবার্ট স্টিউয়ার্ট এবং মেজর জেনারেল জো শেয়ারার নামে দুই ব্রিটিশ সেনা-কর্মকর্তা ক্যালকাটা পোলো ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮১৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল কলকাতা জাদুঘর প্রতিষ্ঠান করে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ড্যানিশ উদ্ভিদবিদ ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ। কলকাতা জাদুঘর হল ভারতের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম জাদুঘর। এটি বিশ্বের নবম প্রাচীনতম জাদুঘরও বটে। কলকাতার জাদুঘরকে ঔপনিবেশিক যুগের গ্রন্থে কলকাতার ইম্পেরিয়াল মিউজিয়াম হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন জিনিসপত্র, বর্ম এবং অলঙ্কার, জীবাশ্ম, কঙ্কাল, মমি এবং বিরল মুঘল চিত্রকলা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
গ্রেট ব্যানিয়ান ট্রি, ১৯৮৯ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের বৃহত্তম গাছের নমুনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কলকাতার কাছেই হাওড়ার শিবপুরে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বোটানিক্যাল গার্ডেনে এটি আপনি দেখতে পাবেন।
প্রায় ১৫০ বছর আগে ১৮৭০ সালে কলকাতা বন্দরের জন্ম। এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনস্থ ভারতের প্রথম বন্দর। এটি লন্ডনের পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বন্দর হিসেবে রয়ে গেছে। সূত্র: আনন্দবাজার
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন