রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরে নতুন পদ্ধতিতে বরই চাষ করা হয়েছে। নতুন এ পদ্ধতির নাম গার্ডলিং। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বাগানের প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ৭ মণ হারে বরই সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া চরে গাছে থোকায় থোকায় বরই সবার নজর কাড়ছে।
উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার মধ্যে নিচপলাশী চরের শত শত বিঘা জমিতে গার্ডলিং পদ্ধতিতে লাগানো হয় ওই বরই গাছ। এই পদ্ধতিটি স্থানীয় বরই চাষিরা আবিষ্কার করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার সদর থেকে পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর নালার ধার দিয়ে যেতে হয় খানপুরবাজার। খানপুরবাজারে পূর্বদিকে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে চকরাজাপুর ইউনিয়নের নিচপলাশী পদ্মা নদীর মধ্যে শত শত বিঘা বরইয়ের বাগান। এ বাগানে ধরে আছে থোকায় থোকায় বরই।
এই চোর বর্ষা মৌসুমে পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় চেনার উপায় থাকে না। তেমনি বরই চাষে প্রতিটি বাগান একেকটির সঙ্গে মিশে একাকার।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের উদ্ভাবিত বরই চাষ পদ্ধতিতে এখানে এসেছে ব্যাপক সাফল্য। এ পদ্ধতির কারণে প্রতিটি গাছে বরই যেমন আকারে বড় হয়েছে, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। ফলে অন্যান্য এলাকার বরইয়ের চেয়ে এই বাগানগুলো বরইয়ের চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক হারে। পদ্মার চরের বরই সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনি, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বরই বাগানে বিপুল পরিমাণ বরই ধরে আছে। যেন পাতা আর বরই সমানে সমানে ঝুলছে গাছে। কোনো কোনোটি পেকে ফেটেও গেছে। আবার গাছের নিচেও পেকে পড়ে আছে। মাটি আর গাছ মিলে বরই আর বরই। পেকে যাওয়া বরই প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা।
বরই নিচপলাশী চরের বরই চাষি সোহেল রানা বলেন, চরের জমি অনেক উর্বর। ওপরের জমিতে যে পরিমাণ সার ব্যবহার করতে হয়, চরের জমিতে সে পরিমাণ সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। বরই গাছ একবার লাগালে অন্তত ১২-১৫ বছর এক টানা বরই হয়। প্রতিটি বাগান গার্ডলিং পদ্ধতিতে বরই চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিটি স্থানীয় বরই চাষিরা আবিষ্কার করেছেন।
প্রতিটি গাছে তিন-চার জায়গায় গোলাকার করে চামড়া বা ছাল কেটে দেওয়া হয়। এতে করে গাছের পাতা যে, শক্তি ধারণ করে, সেটি নিচের দিকে নামতে পারে না। ফলে পাতার পরিমাণ বেশি হয়, তেমনি বরইয়ের পরিমাণও বেশি হয়। গাছ সাধারণ শক্তি পাতা থেকে ছাল দিয়ে শেকড়ে নিয়ে যায়। ছাল গোলাকার করে কাটার ফলে শেকড়ে যেতে পারে না। ফলে শক্তিও নষ্ট হয় না। ফলে গার্ডলিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বাগান থেকে প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ৬-৭ মণ হারে বরই সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে।
নিচপলাশী চরের আরেক চাষি আরিফুর রহমান বলেন, বরই বাগানের কারণে শুধু আমাদের যে লাভ হচ্ছে তা নয়, স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে গাছ থেকে বরই পাড়া শুরু হয়।
তিনি জানান, একেকজন শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫০-৪৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমার ১২ বিঘা জমিতে বরই বাগান আছে। বরই থেকে এ বছর অন্তত ৮-১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ১০০০-১২০০ টাকায় বরই বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার চরে চাষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। তবে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি আর্থিকভাবে কুল চাষেও আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। কুল চাষের গবেষণা চালিয়ে উন্নত জাত সৃষ্টি করে আবাদ করলে আমের মতো বিদেশে রপ্তানি করে অর্থনৈতিকভাবে চাষিদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করব।
তিনি আরও জানান, চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরে প্রতি হেক্টরে ৪৫ টন বরই উৎপাদন হচ্ছে। শুধু পদ্মার চরে ১২ হাজার টন বরই উৎপাদন হবে। চরে বরই চাষে কৃষকদের সাফল্য এসেছে ব্যাপক হারে।
সূত্র: যুগান্তর