জীবনের শুরু থেকে বাংলা গানের সত্যিকারের ধারাকে লালন করে যিনি আমাদের সংগীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি শেখ সাদী খান।
জীবন্ত কিংবদন্তী, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ সংগীত পরিচালক ৩ মার্চ ৭২ বছরে পা রাখছেন। তবে জীবনের বিশেষ এ দিনটিতে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। একেবারেই ঘরোয়াভাবে দিনটি উদযাপন করবেন তিনি।
দেশ স্বাধীনের আগে সাবিনা ইয়াসমিনের বোন ফৌজিয়া খান প্রথম ‘যা যারে যারে পাখি’ গানটিতে শেখ সাদী খানের প্রথম সুর করা গান কণ্ঠে তুলে নেন। ১৯৬৮ সালে মোস্তফা কামাল সৈয়দ প্রযোজিত টেলিভিশনের ‘সুর সাগর’ অনুষ্ঠানে শেখ সাদী খানের সুরে গানে কণ্ঠ দেন প্রয়াত আব্দুল জব্বার ও আরতি ধর।
একই সময়ে এইচএমভি’তে শেখ সাদী খানের সুরেই শওকত হায়াত খান ও মৌসুমী কবির চারটি গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৮০ সালে প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘এখনই সময়’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
এই সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে ‘জীবন মানে যন্ত্রণা’, আবিদা সুলতানার কণ্ঠে ‘একটা দোলনা যদি’ গান দুটির ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে আলোচনায় চলে আসেন শেখ সাদী খান।
পরবর্তীতে তার সুরে যেসব জনপ্রিয় গান এ দেশের সংগীতপ্রেমী শ্রোতা-দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ডাকে পাখি খোল আঁখি’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘আমার মনের আকাশে আজ’, ‘কাল সারারাত ছিল’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না’, ‘তুমি রোজ বিকেলে’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙ্গাল’ ইত্যাদি।
এখন পর্যন্ত ১০৫টিরও বেশি সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন শেখ সাদী খান। সুর করেছেন ৮ হাজারেরও বেশি গান। কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’ ও জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে শেখ সাদী খান একুশে পদকে পান। সর্বশেষ ‘বান্ধব’ ও ‘পদ্মার প্রেম’ সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শেখ সাদী খানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে গানের অনুষ্ঠান ‘স্মৃতিময় গানগুলো’ নিয়মিত প্রচার হয়ে আসছে।
জন্মদিন, বিটিভির অনুষ্ঠান ও বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের প্রসঙ্গে শেখ সাদী খান বলেন, ‘৭২-এ পা দিয়েছি। খুব বেশিদিন হয়তো বাঁচব না। এখনও অনেক স্বপ্নপূরণ বাকি। কিছু ভালো কাজ এখনও করতে পারিনি। কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছি না। কিছু চমৎকার পরিকল্পনা আছে আমার। সেই কাজগুলো করে যেতে পারলে আমাদের সংগীতাঙ্গন আরও সমৃদ্ধ হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিটিভির অনুষ্ঠানের গবেষক মুনশী ওয়াদুদ। তবে অনুষ্ঠানের সময়টা আগের চেয়ে আরও কমিয়ে দেওয়ায় কষ্ট পেয়েছি। ভালো অনুষ্ঠানের সময় কেন কমিয়ে দেওয়া হয় বুঝি না। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে ইউসুফ, অপু, স্বরলিপি খুব ভালো গান গায়। তাদের উদ্দেশ্যে বলব, তারা যেন গানেই মনোযোগটা বেশি দেয় এবং নিজের মৌলিক গান সৃষ্টিতে যেন অধিক মনোযোগী হয়। তাদেরকে নিয়েও কিছু ভালো গান করার স্বপ্ন রয়েছে আমার।
সূত্র: যুগান্তর