দুই দিন আগেই বাণিজ্যমন্ত্রী মিটিং করে সতর্ক করে দিয়েছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সরকারের চেয়ে কারও হাত লম্বা নয়। মিটিংয়ে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বাজার নজরদারি বাড়ানোর বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের এসব হুমকি-ধমকিতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সকালে বাজারে গিয়ে দেখলাম পিঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০ টাকা…!’ গতকাল সকালে বাজার করতে গিয়ে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে আরও জানান, আগের দিন সন্ধ্যায় হাঁটতে বেড়িয়ে প্রতি কেজি পিঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখেন। ভেবেছিলেন পরদিন সকালে পণ্যটি কিনবেন। তবে সকালে বাজারে এসে দেখেন এক রাতেই পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। গতকাল দেশি ও আমদানিকৃত পিঁয়াজ কমবেশি ৬০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হয়েছে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা এ প্রতিবেদককে জানান, তারা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনেছেন। কী কারণে দাম বেড়েছে এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। এক ভ্যানওয়ালা পিঁয়াজ বিক্রেতা বিরক্ত হয়ে বলেন, চাল, ডাল সবকিছুরই তো দাম বাড়ছে, খালি পিঁয়াজের কথা জিগান ক্যান?
গত মাসের শুরুতেও প্রতি কেজি পিঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা বাড়তে শুরু করে। এক সপ্তাহে পণ্যটির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় ওঠে। গত কয়েকদিন ধরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছিল মসলাজাতীয় এ পণ্যটি।
নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে দিশাহারা মানুষ : নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। প্রতিদিন বাড়ছে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিঁয়াজের দর কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। একই সঙ্গে কাঁচা সবজি কিনতেও পকেট ফাঁকা হচ্ছে সবার। নাগালের বাইরে রয়েছে অনেক পণ্য। ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত ছাড়িয়েছে কয়েকটি সবজির দাম। কেউ কেউ শুধু আলু খেয়েই চালাচ্ছেন সংসার। শুধু একই রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ভোজ্য তেলের দর বেসামাল কয়েক সপ্তাহ ধরে। কোনো কোনো বাজারে ভোজ্য তেল পাওয়াই যায় না। পরিস্থিতি প্রতিদিন কঠিন হয়ে উঠছে সবার জন্য। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বরবটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। কেজি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে আরও দুটি সবজি। এর মধ্যে বাজারে নতুন আসা ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। করলার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তবে নিম্নমানের করলা কোথাও কোথাও ৫০ টাকা কেজিও বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পিঁয়াজ এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কোথাও পিঁয়াজ ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ১৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর কেজি এখন ১৮ টাকা। টমেটো আগের সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। শিমের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। মুলার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সাদা মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায়।
সূত্র; যুগান্তর