রমজানে আমরা সেহরির পর থেকে ইফতার পর্যন্ত কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ করি না। ফলে আমাদের পানিশূন্যতা অনেক বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। প্রভাব ফেলে ত্বকে। সেহরি ও ইফতারে তাই অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি ফলের রস, ডাবের পানি পান করা যেতে পারে। সিদ্ধ করা খাবার, ভিটামিন ‘এ’, ‘ই’ ধরনের খাবার, যেমনÑ গাজর, টমেটো, ব্রকলি খাওয়া যেতে পারে। প্রচণ্ড গরমে শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের ফলে অনেক সময় ঘাম না বের হয়ে সেখানেই থেকে যায়। ফলে ঘামাচি, সামার বয়েল বা ফোড়ার মতো বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পাউডার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শরীর শুষ্ক রাখতে ওলেন্টিয়ন কম্পোজিশন, কিউটি কুরা নামে বিভিন্ন পাউডার আমরা ব্যবহার করতে পারি। গরমে সুতি জামা-কাপড় পরিধান করা ভালো। এ সময় খুব প্রয়োজন ছাড়া স্কিনের পোজগুলো ব্লক করার দরকার নেই। স্কিন হেলদি রাখতে যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকু করা যেতে পারে। এ সময় অতিরিক্ত মেকআপে মুখে ব্রণসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় তাই চেষ্টা করতে হবে কম ব্যবহার করতে। এ সময় নারীদের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরও ঘামাচি হয়ে থাকে। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীর সমস্যা আরও বেশি হয়।
নারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগেন মেছতা সমস্যায়। কেননা গরমের সময় এর প্রভাব আরও বেশি হয়। অনেকে এটি প্রতিকারে বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করে। কিন্তু এ ধরনের ক্রিম ব্যবহারে সাময়িকভাবে সুন্দর লাগলেও এটি আসলে ক্ষতিকর। এটি একধরনের অপচিকিৎসা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। মেছতা থাকুক বা না থাকুক, ত্বকের যত্নে অবশ্যই সান ব্লাক ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল সান ব্লাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
শল্যচিকিৎসা : রোজা রাখার কারণে আমাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার ও পানির অভাবে ত্বকের আর্দ্রতা কমে গিয়ে ত্বক কিছুটা প্রাণহীন ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এছাড়া বেশি ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার কারণে ত্বকে ব্রণের উপদ্রব বেড়ে যায়।
টিপস : বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক এই সময়ে ত্বকের যত্নে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
রমজানে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখতে ১ টেবিল চামচ পাকা পেঁপে ভালোভাবে চটকে নিয়ে তার সঙ্গে এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখসহ পুরো গলায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পানিশূন্য ত্বকে নিয়মিত কাঠবাদাম বাটা, ঠাণ্ডা দুধ এবং গোলাপজল দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। এটি শুষ্ক পানিশূন্য ত্বকের জন্য উপকারী।
যাদের ত্বক বেশি শুষ্ক তারা টমেটো, কলা, শসা একসঙ্গে মিলিয়ে প্যাক তৈরি করে ইফতারের ঘণ্টাখানেক পর ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এ প্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে। যাদের ত্বক, শুষ্ক তারা নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের শুষ্কতা দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক সজীব হবে। তবে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রমজানে শরীরে পানিশূন্যতায় অভাবে অনেকের ঠোঁট ফেটে যায়। যাদের ঠোঁট ফেটে যায়, তারা রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে ভালো করে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমাবেন।
প্রতিদিন চার থেকে পাঁচবার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ভালো রাখতে ইফতারিতে ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার কম খেয়ে ঘরে তৈরি জুস খাবেন। অবশ্যই সেহরি ও ইফতারে রাখুন শাকসবজি, ফলমূল, আর বেশি পরিমাণের পানি, শরবত, খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম অবশ্যই দরকার। তা হলে স্বস্তি মেলবে। মাহে রমজান অতিবাহিত হোক স্বস্তি ও শান্তিময়।
লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন চেয়ারম্যান, ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক হাসপাতাল। পান্থপথ মোড়, ঢাকা
সূত্র: আমাদের সময়.কম