আফ্রিকান একটি স্থানীয় রোগ মাঙ্কিপক্স। এ রোগের লক্ষণ জ্বর, গায়ে ব্যথা, বড় আকারের বসন্তের মতো গায়ে গুটি ওঠা। আফ্রিকার পর এ রোগের সংক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে ইউরোপ-আমেরিকায়। ভাইরাসটির রূপ এতই ভয়ংকর, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ মারা যেতে পারেন।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, গুটিবসন্ত ধরনের এ রোগটির সংক্রমণ আগে শুধুমাত্র মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে দেখা গেছে। কিন্তু গত সপ্তাহে ব্রিটেন, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও কানাডায় সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ যুবকদের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ তারা আগে কখনও আফ্রিকা ভ্রমণ করেননি।
আফ্রিকান বিজ্ঞানীরা ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের ঘটনায় বেশ অবাক হয়েছেন। যেসব বিজ্ঞানী আফ্রিকান মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা বলেছেন, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এ রোগের সাম্প্রতিক বিস্তার তাদের বিস্মিত করেছে।
খবরে আরও বলা হয়, শুক্রবার (২০ মে) ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মতো মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
ওয়েওয়ালে তোমোরি, নাইজেরিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের সাবেক প্রধান ভাইরোলজিস্ট গুটিবসন্ত ধরনের রোগ নিয়ে গবেষণা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেশ কয়েকটি বোর্ডে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এ গবেষক বলেন, আমি মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখে অবাক। আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি, দেখি আরও কয়েকটি দেশ সংক্রমিত হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকায় আমরা এ রোগের যে সংক্রমণ দেখেছি, পশ্চিমা দেশগুলোয় তেমন নয়। নতুন কিছু ঘটতে পারে।
জ্বর, গায়ে ব্যথা, বড় আকারের বসন্ত মাঙ্কিপক্সের সাধারণ বৈশিষ্ট হলেও এ রোগের কারণে মুখ বা যৌনাঙ্গে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ডব্লিউএইচও ধারণা করছে, এ রোগে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। পুরুষের সঙ্গে পুরুষের যৌনসম্পর্কের মধ্য দিয়ে এ রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সমকামী পুরুষদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এপি জানিয়েছে, ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ রোগ প্রতিকারে যে তত্ত্ব খুঁজছেন, তার মধ্যে একটি হলো রোগটি যৌন সম্পর্কের মধ্যে বেশি হয় কিনা। কর্মকর্তারা ডাক্তার ও নার্সদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এও জানিয়েছেন, সাধারণ জনগণের মধ্যে এ রোগের ঝুঁকি কম।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, যৌনসম্পর্কের কারণে এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। সমকামী ও উভকামী পুরুষে এ রোগের পরিমাণ বেশি। এ রোগ কীভাবে বাড়ে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন স্বাস্থ্য দফতর।
ডব্লিউএইচও আরও জানায়, নাইজেরিয়া বছরে প্রায় তিন হাজার মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ সাধারণত ইঁদুর ও কাঠবিড়ালির মাধ্যমে ছড়ায়।
শুক্রবার ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি ১১টি নতুন মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে। সংস্থাটি বলছে, এটি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে সাম্প্রতিক সংক্রমণের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত। কানাডায় এ পর্যন্ত ১৩ জন মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। স্পেন ও পর্তুগালে ১২ জন আক্রন্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সংক্রমণগুলো সেসব অল্পবয়সী পুরুষ যারা অন্য পুরুষের যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, তাদের মধ্যে বেশি। রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসার পর তারা শনাক্ত হন। ব্রিটেনে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতই ভয়ংকর, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ মারা যেতে পারেন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার কোনো উপায় নেই। তবে, অন্যান্য ভাইরাসের মোকাবিলার মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে এর প্রকোপ কমানো যায়। যদিও এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান।
সূত্র: এপি