রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক চাপ বয়ে আনছে তা মোকাবিলায় জাতিসংঘে সুনির্দিষ্ট ৪ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে সংহতি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ-এর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেয়া ভাষণে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় এই ৪ দফা প্রস্তাব দেন তিনি।
জাতিসংঘ আয়োজিত জিসিআরজি এর প্রথম পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহ্বানে আয়োজিত এই গ্রুপের ৬ জন বিশ্ব নেতার অন্যতম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।
করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেয়া উদ্যোগ এবং তার সুফল তুলে ধরেন তিনি।
এ পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে, সামাজিক-নিরাপত্তা-নেট কর্মসূচির প্রসার এবং নিয়মিতভাবে ১ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য পৌঁছে দেয়া, রপ্তানি খাত এবং এসএমইকে সমর্থন করার জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়া এবং ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে নেয়া এই পদক্ষেপগুলি গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করেছে।
সারা বিশ্বে নিত্যপণের দামে লাগাম টানতে এর বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উন্নত বিশ্বের কৃষি প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ আরো জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে। যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ এবং এসআইডিগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অবিলম্বে এবং লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে এ খাদ্য ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় যে কোনো মূল্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশসমূহ ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরো সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।