যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি রোধে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ একাধিকবার নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে। এতে অর্থনীতির গতি ক্রমে মন্থর হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিলেও শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। এ বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত মার্চ থেকে ফেড সুদের হার বাড়াতে শুরু করলে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে আমেরিকান মুদ্রা।
ফলে সংকটের এ সময়ে নিরাপদ হিসেবে অনেকই ডলারকেন্দ্রিক বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময়ে ডলারের দাম বেড়ে দুই দশকে সর্বোচ্চ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অন্য মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ায় এটি আমেরিকান নাগরিকদের জন্য ভালো খবর। এতে আমদানি পণ্য সস্তা হচ্ছে তাদের কাছে, কিন্তু সুদের হার বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাতে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দায় পড়লে পরিস্থিতি দ্রুতই বদলে যাবে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা সম্প্রতি এক নোটে লেখেন, মার্কিন ডলার ‘উচ্চমাত্রায় অতিমূল্যায়িত’ হচ্ছে। তাঁরা লেখেন, এটি স্পষ্ট নয় যে আমেরিকা মন্দায় পড়লে ডলারের শক্তিশালী এ অবস্থান বজায় থাকবে কি না। গত এপ্রিলে গোল্ডম্যান স্যাকসের মূল্যায়নে বলা হয়, আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা আসছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ হয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনীতি ক্রমে মন্থর হয়ে মন্দার দিকে যেতে পারে। তবে আমেরিকা মন্দায় পড়লে ডলার শক্তিশালী থাকবে কি না, এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরা একমত নন। অনেকেই মনে করেন, ডলার নিকট ভবিষ্যতে ভেঙে পড়বে না।
আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা নিয়ে হাউজিং প্রতিষ্ঠান ফ্যানি ম্যায়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগ ডানক্যান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি রুখতে ফেড যে হারে সুদের হার বাড়াচ্ছে তাতে করে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মাঝারি ধরনের মন্দায় পড়বে। ’ তাঁর মতে, আগামী বছর বেকারত্বের হার বেড়ে হবে ৪.৪ শতাংশ। বর্তমান হার ৩.৬ শতাংশ। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্ট বিজনেসের প্রধান অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ডানকেলবাগও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে একটি মন্দা আসছে। গত এপ্রিলে এনএফআইবির এক জরিপে ক্ষুদ্র ব্যবসয়ীরা জানান, আগামী ছয় মাসে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে তাঁরা মনে করছেন, যা হবে ৪৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। এক-তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী জানান, মূল্যস্ফীতি তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, যা ১৯৮০ সালের পর আর দেখা যায়নি।
মুডিস অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি এক নোটে জানান, আগামী ১২ মাস আমেরিকার অর্থনীতিতে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাবে এবং ২৪ মাসে মন্দা দেখা যাবে। ’
সূত্র : ব্লুমবার্গ, ফরচুন