লর্ডস টেস্টে জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে এখন ইংল্যান্ড। সিরিজের প্রথম টেস্টে ২৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শনিবার (৪ জুন) তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২১৬ রান। জয়ের জন্য ৫ উইকেট হাতে রেখে তাদের দরকার আর ৬১ রান।
ব্যাটিং ধস দেখা গেছে এদিনও। ৩৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস থেমে যায় ২৮৫ রানে। ড্যারিল মিচেল ও টম ব্লান্ডেলের ১৯৫ রানের জুটি ভাঙার পরই মূলত পথ হারায় তারা। সেঞ্চুরির দুয়ারে থেকে দিনের খেলা শুরু করে মিচেল কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছালেও ৪ রানের আক্ষেপে পোড়েন ব্লান্ডেল।
বোলিংয়ে যদিও কাইল জেমিসনের হাত ধরে দারুণ শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। ব্যক্তিগত ১ রানের সময় আউট হয়েও জীবন ফিরে পান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। কারণ বলটি ‘নো বল’ ছিল। ওই সময় স্টোকস আউট হলে ইংল্যান্ডের স্কোর হতো ৫ উইকেটে ৭৬। জীবন পেয়ে সাবেক অধিনায়ক রুটের সঙ্গে ৯০ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন বর্তমান অধিনায়ক। তার ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৫৪ রান। রুট অপরাজিত ৭৭ রানে। উইকেট থেকে এদিনও সহায়তা পান পেসাররা। গতি, সুইং আর বাউন্সারের মিশেলে দারুণ বোলিংয়ে স্টোকসের উইকেটসহ জেমিসনের শিকার ৪টি।
নিউজিল্যান্ড শনিবার তৃতীয় দিন শুরু করে ৪ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে, ২২৭ রানে এগিয়ে থেকে। ৯৭ রানে ব্যাটিং শুরু করা মিচেল প্রথম বলে ৩ রান নিয়ে স্পর্শ করেন দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। দিনের দ্বিতীয় ওভারে ইংল্যান্ড পায় দ্বিতীয় নতুন বল। খানিক পর দুর্দান্ত এক ওভারে চিত্র পাল্টে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। টানা তিন বলে নিউজিল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট। মিচেলের ২০৩ বলে ১২ চারে ১০৮ রানের ইনিংস শেষ হয় কট বিহাইন্ড হয়ে। ব্লান্ডেলের সঙ্গে তার ১৯৫ রানের জুটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ। ১৯৯৪ সালে এই লর্ডসেই মার্টিন ক্রো ও শেন থমসনের ১৮০ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।
পরের বলে ডি গ্র্যান্ডহোমের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান বের হয়ে আসেন অনেকটা বাইরে, স্লিপ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন অলি পোপ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ডি গ্র্যান্ডহোম তখন বেশ বাইরে, রান আউট। পরের বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে জেমিসনের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন ব্রড। ৪ উইকেটে ২৫১ থেকে কিউইদের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ২৫১।
৯০ রানে দিন শুরু করে তখন ৯৪ রানে অপরাজিত ব্লান্ডেল। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে ডাবল নিয়ে তিনি পৌঁছে যান তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির খুব কাছে। কিন্তু পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। ১৯৮ বলে ১২ চারে গড়া তার ৯৬ রানের ইনিংসটি। টিম সাউদি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাড়ান লিড। ২৬ বলে ৪ চারে ২১ রান করা সাউদিকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান কনকাশন সাব হিসেবে অভিষেক হওয়া লেগ স্পিনার ম্যাট পার্কিনসন। মাঝে এজাজ প্যাটেলকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান অভিষিক্ত পেসার ম্যাথু পটস।
রান তাড়ায় ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন অ্যালেক্স লিস ও জ্যাক ক্রলি। উদ্বোধনী জুটিতে দুই জনে তুলে ফেলেন ৩১ রান। এরপরই লিসকে বোল্ড করে দেন জেমিসন। লাঞ্চের পরপর দীর্ঘদেহী এই পেসার বিদায় করেন ক্রলিকেও। শরীর থেকে বাইরের বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দেন তিনি। অলি পোপ ব্যর্থ আরও একবার। তার স্টাম্প এলোমেলো করে দেন বোল্ট। তিনটি চার মেরেই জেমিসনের বলে বোল্ড হয়ে যান জনি বেয়ারস্টো। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৬৯।
কয়েক ওভার পরই স্টোকসের ওই নো বলে বেঁচে যাওয়া। জীবন পেয়ে সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান স্টোকস। স্পিনার এজাজ প্যাটেলের তিন বলের মধ্যে মারেন দুটি ছক্কা। পূর্ণ মেয়াদে নেতৃত্বের অভিষেকে তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন ১০৫ বলে। ওই ওভারেই জেমিসনের বাউন্সারে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন স্টোকস। রুট এরপর ফিফটি করেন ১০৭ বলে। বেন ফোকসের সঙ্গে দিন শেষ করেন তিনি অবিচ্ছিন্ন ৫৭ রানের জুটিতে। ফোকস অপরাজিত আছেন ৯ রানে। চতুর্থ দিনে এই দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৩২
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৪১
নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৯১.৩ ওভারে ২৮৫ (আগের দিন ২৩৬/৪) (মিচেল ১০৮, ব্লান্ডেল ৯৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, জেমিসন ০, সাউদি ২১, এজাজ ৪, বোল্ট ৪*; অ্যান্ডারসন ২১-৭-৫৭-২, ব্রড ২৬-৭-৭৬-৩, পটস ২০-৩-৫৫-৩, স্টোকস ৮-১-৪৩-০, পার্কিনসন ১৫.৩-০-৪৭-১, রুট ১-০-২-০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭৭) ৬৫ ওভারে ২১৬/৫ (লিস ২০, ক্রলি ৯, পোপ ১০, রুট ৭৭*, বেয়ারস্টো ১৬, স্টোকস ৫৪, ফোকস ৯*; সাউদি ১৯-৫-৫৮-০, বোল্ট ২০-৩-৬১-১, জেমিসন ২০-৪-৫৯-৪, ডি গ্র্যান্ডহোম ৩.৫-১-৩-০, মিচেল ০.১-০-০-০, এজাজ ২-০-২২-০)