অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর করা হচ্ছে। বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ ৩ জুলাই শেষ হওয়ার পর এ দায়িত্বে আসছেন আব্দুর রউফ।
সরকারের সর্বোচ্চ মহল সোমবার নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদারের নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করেছেন বলে একটি সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে।
রউফ তালুকদার ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে (বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচ) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন সরকারি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে পাবলিক ফাইন্যান্স এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষত্বের কারণে তার কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে।
২০১৮ সালের ১৮ জুলাই অর্থ সচিবের দায়িত্ব নেয়ার আগে অর্থ বিভাগে ১৮ বছরেরও বেশি সময় কাজ করেছেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এ ছাড়া দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশনে কুয়ালালামপুরে প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) হিসেবেও কাজ করেছেন।
রউফ তালুকদার প্রায় চার বছর জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে সফলতার সঙ্গে অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালনকালেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ (বিবিএসের নতুন হিসাবে, পুরোনো হিসাবে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জিত হয়; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির সংকট মোকাবিলাতেও অর্থ সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনতেও রউফ তালুকদার বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।
বিসিএস ৮৫ ব্যাচের আব্দুর রউফ তালুকদারকে ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদমর্যাদা দেয়া হয়। করোনাকালীন দেশের অর্থনীতির ক্রান্তিকালে তিনি অর্থনীতি চাঙা করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার পরামর্শ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়ায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাজেট সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অবসরভোগী সরকারি চাকুরেদের ইএফটির মাধ্যমে পেনশন প্রদান এবং সঞ্চয়পত্রের অটোমেশনে তার ভূমিকা ছিল অনেক। ২০২১ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবির ২০১৬ সালে চার বছরের জন্য গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। সে হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।
তবে এর ৩৪ দিন আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন।
ফজলে কবিরের ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। তার আগেই মে মাসে তার দায়িত্বের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়।
ফজলে কবির ছয় বছরের বেশি সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে তারও বিশেষ অবদান রয়েছে। ফজলে কবিরের মেয়াদে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়ায়।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও দীর্ঘদিন ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। করোনা মহামারি এবং যুদ্ধের মধ্যেও অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখতে বিচক্ষণতার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন ফজলে কবির।