পেস বোলিং একাডেমি থাকায় ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির বোলার পাওয়া যায় আইপিএলের প্রায় প্রতিটি দলে। বাংলাদেশে পেসারদের জন্য বিশেষ একাডেমি না থাকায় খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না পেসারদের। তাই দ্রুত পেস বোলিং একাডেমি তৈরীর তাগিদ দিলেন অভিজ্ঞ কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সেই সাথে স্পিনারদের জন্যও আলাদা একাডেমি গড়ার পরামর্শ তার। আধুনিক ক্রিকেটে উন্নতি করতে প্রতিটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক রাখার দাবি সালাউদ্দিনের।
এবারের আইপিএলের আলোচিত পেসার উমরান মালিক। গতির ঝড় তুলে আইপিএল ছাপিয়ে নজর কেড়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটে। ২২ বছর বয়সী এই পেসার জায়গা পেয়েছেন ভারত দলেও। শুধু উমরান মালিকই নন, ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির ভারতীয় বোলার ছিল আইপিএলের প্রতিটি দলে।
অথচ ১০ বছর আগেও ভারতীয় দল কিংবা আইপিএলে এমন গতিময় পেসার ছিলো না। ভারতের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি প্রদেশ ভিত্তিক গড়ে উঠেছে অনেক পেস একাডেমি। চেন্নাইয়ে অবস্থিত পেস ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি আছে বিসিসিআইয়ের। যেখান থেকে জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন অনেক পেসার। খারাপ সময় কাটানো অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের পেসাররাও পেস ফাউন্ডেশনে গিয়ে সুফল পেয়েছেন। ২০১২ সাল যার দায়িত্বে আছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা।
বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। জাতীয় দলে ২-১ জন ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতির বোলার থাকলেও বিকল্প নেই ঘরোয়া স্তরে। কোনো পেসার জাতীয় দলের বাইরে চলে গেলে নিজেকে শোধরানোর জন্য পান না পরামর্শক। কালেভদ্রে পেসারদের নিয়ে ক্যাম্প হলেও, বছর জুড়ে পাওয়া যায় না কোন কার্যক্রম। ঘরের মাঠে দলও ভরসা করতে পারে না পেসারদের উপর। সমস্যা উত্তরণে পেস একাডেমি গড়ার পরামর্শ অভিজ্ঞ এই কোচের।
সালাউদ্দিন বলেন, ‘অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল, আনফরচুনেটলি হয়নি। আমি জানি না বোর্ডের কী পরিকল্পনা। আপনি যদি এখন ইন্ডিয়ার লাস্ট ১০ বছর আগে তাকান আপনি কিন্তু ১৪০ কিলামিটার গতিতে বল করা বলার পাবেন না। কিন্তু এখন যদি আপনি আইপিএল খেলা দেখেন, প্রতিটি টিমে দেখবেন ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করে, ইভেন ১৪৫ ও ওঠে। গত বছর দেখলাম ১৩৫, এ বছর দেখি ১৪৫ এ বল করছে। তার মানে প্রতি বছরই তাদের পেস বোলাররা অনেক ডেভলপ করছে। এটা কীভাবে হয়েছে? তারা তো এটা নতুন করে আবিষ্কার করেনি। বা তারা নতুন করে কিছু খাওয়া-দাওয়া করেনি।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা টেনে এই কোচ আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় তাদের স্ট্রাকচারড ওয়েতে অনুশীলন করা হয়। ইন্ডিয়াতে প্রচুর বোলিং একাডেমী আছে, পেস বোলিং একাডেমী বলুন, স্পিন বোলিং একাডেমী আছে। তারা হিউজ পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করেছে। আমি যতদূর জানি রাজস্থানের পেস বোলিং একাডেমীটা খুব ভালো। সেখানে বাহির থেকে কোচ আসে এবং তাদের প্রত্যেকটা ফার্স্ট বোলার কিন্তু ওখানে যায় পেস বোলিং করতে। আমাদের এখানে করাটা তো অনেক বেশি নেসেসারি।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে এটা এখনো হয়নি। আমাদের স্পেশালাইজড ট্রেনিং করানোর মতো কোচকে যে গড়ে তুলবেন, সেটা কীভাবে বানাবেন, আপানার তো কোন সিস্টেমই নাই। আপনার পেস বোলিং এক্সপার্ট বলেন, স্পিন বোলিং এক্সপার্ট বলেন আর ব্যাটিং এক্সপার্ট, আপনার তো ইনিস্টিটিউশন লাগবে। আমার মনে হয় এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল এবং এখন যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত। ক্রিকেট খেলাটা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, পুরটাই স্পেশালাইজড ট্রেনিংয়ের উপর চলে গেছে।’
সম্প্রতি রব উঠেছে, সাকিব, মিরাজ, তাইজুলদেরও বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে না বিসিবি। জাতীয় দলে নেই কোনো লেগ স্পিনারও। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানেও রয়েছে লেগ স্পিনিং একাডেমি। অথচ ৯০০ কোটি টাকার মালিক বিসিবি’র নেই স্পিনারদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা। এদিকে গুরুত্ব দেয়ার সঙ্গে দেশের প্রতিটি বিভাগে বিশেষজ্ঞ তৈরীর পরামর্শ এই কোচের। সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যকটা সেক্টরেই আপনাকে স্পেশালাইজড ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার কোচদেরও ডেভলপটা করতে হবে। কোচরা আপনার যতটা ভালো হবে, গ্রাসরুটের কোচরা যত ভালো হবে, তারা যত বেশি স্পেশালাইজড হবে টিম নিয়ে কাজ করাটা তত বেশি সহজ হয়ে যাবে। ইংল্যান্ডের প্লেয়াররা এত জোরে জোরে মারে কীভাবে? তাদের বায়োমেকানিক্যাল এনালাইসিস করার জন্যও এক্সপার্ট কিন্তু সবসময় মাঠে থাকে।তাদের ছোট ছোট প্রতিটা জায়গায় কিন্তু এক্সপার্ট আছে। আমি বলবো এক্সপার্ট আপনাকে তৈরি করতে হবে এবং তাদের ভালো ভাবে ডেভলপ করতে পারলে অনেক সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ জায়গায় আপনি সাফল্যের দেখা পেতে পারেন।’