মেয়ে রাদিয়া ন্যায়বিচার দাবি দাবি করে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থপাচারের মামলায় কারাগারে থাকা ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাইয়ের এক ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে যাওয়াতা আফনান রাদিয়া। তার বাবার বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ দাবি জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে যাওয়াতা আফনান বলেন, গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে আমার বাবা ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সম্পদের হিসাব গণমাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। সিআইডি, দুদক, বিএফআইইউ হাইকোর্টে অর্থ পাচারকারীর যে তালিকা জমা দিয়েছে সেখানে আমার বাবার নাম না থাকায় প্রমাণিত হয়েছে। গণমাধ্যমে দেওয়া আমার হিসাব সত্য ও সঠিক ছিল।অভিযোগপত্রের ভুল জমির হিসাবগুলো বাদ দিলে প্রকৃত জমির পরিমাণ আয়কর নথিতে আয়ের উৎসসহ উল্লেখ আছে। যাদেরকে এ মামলার সাক্ষী বানানো হয়েছে তাদের কাছে তার পিতার জমি বায়না বাবদ টাকা পাওনা রয়েছে। অস্ত্র মামলার এজাহার পরিবর্তন করা হয়েছে। এজাহারের সাথে কোর্টে প্রেরণ করা ফরওয়ার্ডিং, রিমান্ড আবেদন ও প্রতিবেদনের মিল নেই। তদন্ত কর্মকর্তা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন না করা সত্ত্বেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী ১৬৪ ধারার জবাববন্দি গ্রহণের আগে আসামিকে আলাদাভাবে তিন ঘণ্টা করে সময় দিতে হয়। আমাদের মামলাগুলোতে এসব আইন মানা হয়নি।
তিনি বলে, একটি কুচক্রি মহল ও প্রশাসনের সরকারবিরোধী কর্মকর্তারা ব্যক্তিকে শায়েস্তার নামে এই রূপকথার মামলা তৈরি করে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। আবারও বলছি, সৎসাহস আছে বলেই আমাদের সম্পদের হিসাব গণমাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। যদি আমাদের হিসাবের ভুল ধরে সমালোচনা করেন, তাহলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মেয়ে বলেন, এই মামলাটি এখন রাজনৈতিক খোরাকে পরিণত হয়েছে। মামলাকে অতিরঞ্জিত করার ফলে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারদলীয় লোকের নামে মামলা হলে স্বাভাবিক আইন ও বিচার তার পক্ষে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার।
উপার্জনের চেয়ে পাচার বেশি হয় কিভাবে প্রশ্ন রেখে রাদিয়া বলেন, ১৮৮টি ব্যাংক একাউন্টে লেনদেনের পরিমাণ দুই হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈধ হিসাবে দেখা যাচ্ছে ব্যাংক ঋণ ১৭১ কোটি এবং টেন্ডার সিকিউরিটি ২০৮ কোটি মিলিয়ে ৩৭৫ কোটি টাকা। অথচ চাতুর্যতার মাধ্যমে এখানে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিলের টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করে দুই হাজার ৯১০ কোটি টাকা থেকে ৩৭৫ কোটি টাকা বিয়োগ করে দুই হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন দেখানো হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে জমা করা অর্থকে আয়ের উৎস হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু অভিযোগপত্রে উত্তোলন করা অর্থকে এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক লেনদেনের পরিমাণকেও আয় হিসেবে ধরে এই রূপকথার মামলাটি তৈরি করা হয়েছে। জমা না হলে উত্তোলন হবে না। তাহলে এই দুই হাজার ৯১০ কোটি টাকার মধ্যে জমা করা অর্থের পরিমাণ কত এবং উত্তোলনের পরিমাণ কত?
বিজ্ঞপ্তিতে মামলার কিছু অসঙ্গতিও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, আমার বাবা গত বছর ২ বছর যাবৎ কারাগারে আটক আছেন। গ্রেফতারের পর রিমান্ড নিয়ে তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং ১৪টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এই নির্যাতনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লুটরাজ চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। সরকারি কাজের বিপরীতে ব্যাংক লোন একাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে। আমার মা-চাচির নামে চুরির মামলাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের ছোট ছোট ৯টি ভাই বোন আমরা।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারকে দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ বাড়ি যেতে দেওয়া হয় না। আমার বাবা ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। একজন সাংবাদিকের সন্তান হিসেবে সাংবাদিক সমাজের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যদি সত্যি হই তাহলে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপনারা আমাদের পরিবারের পাশে থাকবেন।