হৃদরোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছেন চিকিৎকরা। বিষয়টি শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে অনেক সংকটের সমাধান হবে। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এ সংকটাপন্ন অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকারের হাইকমান্ড। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। তখন বিষয়টা সরকার দেখবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে শনিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। আমি সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলেছি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেছেন, তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হলেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত। সরকার তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। বিষয়টা আমরা দেখব।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়, তবে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে পারবেন।
দুই মন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে আদালতে আবেদন করা হলে খালেদা জিয়া কি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেতে পারেন? জবাবে তারা বলেছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হলে এবং বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আদালতে অনুমতির আবেদন করা হলে সরকার হয়তো এ অনুমতির ব্যাপারে জোরালোভাবে বিরোধিতা নাও করতে পারে। খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে-সে বিষয়টিও বোঝার চেষ্টা করছেন তারা।
সূত্র জানায়, দণ্ডিত হয়ে জেলে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের একজন প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশকিছু শর্তের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় সরকারের প্রয়াত ওই নীতিনির্ধারকের সঙ্গে সে সময়কার আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। নির্বাচনের পর ওই আলোচনা আবার শুরু হয় এবং সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন খালেদা জিয়ার স্বজনরা। এ সময় তারা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তা সত্ত্বেও সরকার তাদের নেত্রীর সুচিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অবশ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না মিললেও খালেদা জিয়ার স্বজনরা হাল ছাড়েননি। তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তাদের আশা ছিল, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিদেশে যেতে পারবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু শুক্রবার খালেদা জিয়ার হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে তার হার্টে একটি রিং পরানো হয়েছে।