কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫২টির ফল রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা মার্কা) পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩১৯ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬৫ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (ঘোড়া মার্কা) পেয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩৭ ভোট।
নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্র দখল বা বড় ধরনের প্রভাব বিস্তারের ঘটনা নেই। সহিংসতার খবরও পাওয়া যায়নি। সেদিক থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রথম ভোট বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন করল।
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ, স্থানীয় প্রভাব খাটানো এবং বহিরাগত হিসেবে ভোটকেন্দ্র এলাকায় প্রবেশ করার দায়ে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এর আগে আজ বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট শুরুর এক ঘণ্টার মাথায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সমস্যায় পড়েন ভোটাররা। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। বেলা ১০টার দিকে বৃষ্টি থামে। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
কোনো কোনো ভোটার তাদের আঙুলের ছাপ ইভিএমে মেলেনি বলে অভিযোগ করেন। তাছাড়া ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ ছিল। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। কেউ কেউ ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। এই ধীরগতির কারণে ভোট শেষ হওয়ার পূর্বঘোষিত সময়সীমা বিকেল ৪টার পরও ভোটগ্রহণ করা হয়।
সমকাল প্রতিবেদক অমিতোষ পাল, কামাল উদ্দিন, যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ ও সমকালের কুমিল্লা প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। সারাদিন তারা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সরেজমিনে ঘুরেছেন। তারা জানান, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটগ্রহণে ধীরগতির কারণে বিকেল ৪টার পরও কিছু কেদ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে ৪টার সময় যারা ভোট দিতে কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ ছিলেন তাদেরই শুধু ভোট নেওয়া হয়। নতুন করে কাউকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এবারই কুমিল্লায় প্রথম ইভিএমে ভোট হলো। এর আগে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আলোচনায় বেশি আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত (নৌকা প্রতীক) এবং গত দুইবারের মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) নাম। এই দুজনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
অন্য তিনজন হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (ঘোড়া) ও কামরুল আহসান (হরিণ)। এরমধ্যে মনিরুল হক বিএনপির এবং নিজামউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দুজনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
কুসিক নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী লড়াই করছেন।
নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ৬৪০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুইজন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। নির্বাচনে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচনে ইভিএমে কোনো ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য ছিলেন ৩৫ জন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা দেওয়া হয়। প্রতি বুথে (কক্ষে) একটি করে মোট ৬৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। ভোটকক্ষের ভেতরে কোনো এজেন্ট কোনো ভোটারকে তার পছন্দের প্রতীকে ভোটদানে প্রভাবিত করলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।