কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় এখন পানিতে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। পানির নিচে তলিয়ে গেছে বসতঘর-ভিটেমাটি। ঘরের চালে পানি ওঠায় নৌকায় বসবাস করছেন অনেকে। এমন অবস্থায় শুকনো খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছে বন্যাকবলিত এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
ঘরের চালেও পানি, নৌকায় বসবাস
বৃষ্টি আর উজানের ঢল আসা অব্যাহত থাকায় উত্তাল হয়ে উঠেছে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬ নদ-নদী। দু-কূল উপচে পানি ঢুকছে নতুন নতুন গ্রামে। ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ও ধরলার ফেরিঘাট পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে এ পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলার কমপক্ষে ২০টির মতো ইউনিয়নের চর, দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের আড়াই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেছে।
ফলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় নৌকায় বসবাস করছেন অনেকে। আর নৌকা না থাকায় পানির মধ্যে চৌকি বা মাচায় ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অনেক পরিবার।
ঘরের মধ্যে পানি থাকায় খাবার রান্না করা যাচ্ছে না। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের। এ অবস্থায় নৌকায় মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর ফেরিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, তারা ৯ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এ পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে বন্যার পানিতে ৫ হাজার ৪৪৯ হেক্টর ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫০৭ হেক্টর আউশ ধান, ২ হাজার ৪৫৬ হেক্টর পাট, ৭৯ হেক্টর তিল, ১ হাজার ১১৬ হেক্টর শাকসবজি, ৩৫ হেক্টর চিনা, ৩৫ হেক্টর ভুট্টা, ৩০ হেক্টর চীনাবাদাম ও ৫৩ হেক্টর মরিচ ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ২০ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশুখাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।