ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যা একবার হলে মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়। ডায়াবেটিস মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে: টাইপ ১ ডায়াবেটিস, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস। আমাদের দেশের ৯৫ ভাগ রোগীই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই সব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একটি কার্যকরী উপায় হলো ইনসুলিন গ্রহণ।
যখন শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায় বা ইনসুলিন যখন আমাদের শরীরে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় বলা হচ্ছে ডায়াবেটিস।
তাই ডায়াবেটিস ইনসুলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের শরীরে ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমানো। খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ অবস্থায় শরীরে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। যেমন, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না বলে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের প্রথমদিক থেকেই ইনসুলিন নিতে হয়।
তবে আশার কথা হলো, ডায়াবেটিস রোগীদের ৯০ ভাগই টাইপ ২-এ আক্রান্ত। এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধ যখন শরীরে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকরা ইনসুলিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তবে যে ধরনের ডায়াবেটিসেই আপনি আক্রান্ত হন না কেন, ইনসুলিন গ্রহণের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যার ফলে প্রায়ই তারা নানা শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হন। আসুন জেনে নিই ইনসুলিন সম্পর্কিত কিছু ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে।
১. অনেক রোগীই মনে করেন, চিকিৎসকের ইনসুলিন গ্রহণের পরামর্শ মানেই রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা মোটেও সঠিক নয়।
২. আসলে এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি মাত্র। রোগী ডায়েট, ব্যায়াম ও ওষুধের নিয়ম মানার পরও যখন আর অগ্ন্যাশয় থেকে পর্যাপ্ত ইনসুলিন বেরোয় না, তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন দিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে হয়। তাই ইনসুলিন গ্রহণে কখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন না।
৩. আবার অনেক রোগীই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কোনো নিয়ম আগে মানলেও ইনসুলিন গ্রহণের পর থেকে তা মানেন না, যা মোটেও উচিত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৪. শরীরে ইনসুলিনের প্রয়োজন হওয়ার পরও যদি কোনো রোগী তা গ্রহণ না করেন, তবে তার শরীরে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। শুধু তাই নয়, হৃদ্যন্ত্র, কিডনি থেকে শরীরের সব প্রত্যঙ্গই খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
৫. ইনসুলিন নিলে অনেকেই ভাবতে শুরু করেন তার ওজন কমে যাবে। অথচ এমন কোনো কিছুরই সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
৬. ইনসুলিন নিলেও ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরচর্চা বন্ধ করা উচিত নয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত ইনসুলিন নেয়া সত্ত্বেও রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিকভাবে কমে না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই ইনসুলিন গ্রহণের সময়ও ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যায়াম করার অভ্যাসে ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।
৭. ইনসুলিন বিষয়ে অনেকেই যে বিষয়টি জানেন না তা হলো ১২-১৪ ঘণ্টার বেশি ইনসুলিন ফ্রিজের বাইরে রাখলে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সবসময় ইনসুলিন ফ্রিজে রাখুন।
৮. ইনসুলিন গ্রহণের সময় আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে–নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ইনসুলিন গ্রহণের সময় ইনজেকশনের সুচ বদলানো। এই নিয়মের অবহেলায় অনেক ডায়াবেটিস রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই জীবনকে সুন্দর ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সব ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই এসব ভুল বা ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা