ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে মানুষকে রক্ষায় কাজ করছে সেনাবাহিনীও। বন্যার ফলে ওই অঞ্চলগুলোতে সড়কের পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
আজ রোববারের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের আরও অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের আট বিভাগে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এ ধারা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, রোববার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী দুই দিন (মঙ্গলবার পর্যন্ত) এই বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ।
অন্যদিকে সিলেটে শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (২৪ ঘণ্টায়) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলাম। আগামী দুদিন অর্থাৎ ২০ জুন পর্যন্ত সেখানে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আজ রোববারের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের আরো অন্তত ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। এসব এলাকায় বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরো বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। সারা দেশের ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানিটা আবার নিচের দিকে নেমে এলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানির ঢল দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে প্রবেশ করছে। ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পাবনা বন্যাকবলিত হতে পারে। এ ছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানি আরো নিচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, সোমবার থেকে পানি ভৈরব বাজার হয়ে নেমে যাবে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলে আরও তিন থেকে চার দিন বন্যার পানি বাড়তে থাকবে। যমুনা অববাহিকায় পানি বাড়তে থাকবে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি হবে না এ সময়ে।