সুনামগঞ্জ শহর এখনো কোমর পানির নিচে। শহরের বহুতল প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি আশ্রয়কেন্দ্র। গত চার দিন ধরে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন জেলাটি। সেখানে নেই বিদ্যুৎ, নেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক। দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খাবার সংকট আরো বেড়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে কোথাও কোমরা সমান,কোথাও হাঁটুসমান, আবার কোথাও বুকসমান পানি।
তবে, আশার কথা হচ্ছে জেলার কোথাও কোথাও নামতে শুরু করেছে পানি।সরজিমনে গিয়ে দেখা যায় সুনামগঞ্জের উত্তর মল্লিকপুর এলাকার একতলা একটা বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন মঈনুল হক। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্লাবিত হয় তার বাড়িসহ আশপাশের এলাকা।
মঈনুল হক জানান, কোন কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ পানি দেখতে পান উঠানে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে যায় ভবনের নিচ তলা। একই রকম দুর্ভোগে পড়েছেন প্রতিবেশি শহীদ মিয়াও। তার টিনের ঘরের চাল স্পর্শ করে পানি। এরপর আশ্রয় নেন মঈনুল হকের বাড়ির সিঁড়িতে।
স্থানীয়রা আরো জানান, বন্যার পানিতে তাদের সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের নতুনপাড়া, হাসননগর, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, ময়না পয়েন্ট, বক পয়েন্টে কোমর থেকে বুকসমান পানি ছিল। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। এসব এলাকার মানুষজনকে নৌকায় চলাচল করতে দেখা গেছে।
বন্যার্ত মানুষেরা বলছেন, বিদ্যুৎ নেই, মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক নেই। যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রাত নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা শহর। এছাড়া মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাবারেও দেখা দিয়েছে চরম সংকট।
কাদিরপুর গ্রামের রিপন সরকারের গোলায় থাকা প্রায় ৫০০ মণ ধান এখন পানির নিচে। সেই সঙ্গে গবাদি পশু রাখা নিয়েও পড়েছেন সঙ্কটে।
রিপন বলেন, “আমার আটটা গরু। তারারে সরানির জায়গা নাই। পানির মধ্যেই একটু উঁচু জায়গা দেইখ্যা রাখছি। চোরের ভয়ে নিজেও হেইখানে থাকি।”
গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানালেন খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের পাশের উত্তর আঁটিপাড়ার মিন্টু মিয়া, রূপনগর গ্রামের একদিল মিয়া।
সুনামগঞ্জ ও সিলেটের পাশের হাওরাঞ্চলের জেলা নেত্রকোণায় প্রতিদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিই এর মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে হাওর সংলগ্ন খালিয়াজুড়ি, কলমাকান্দা ও মোহনগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে নৌ-বাহিনী।