ভাটির দেশ বাংলাদেশ। অধিক বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে এদেশে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয়। ডুবে যায় ঘরবাড়ি, মাঠ-ঘাট। সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জ আবারো বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এবারের বন্যা ইতিহাসের ভয়াবহতম বলে মনে করা হচ্ছে। বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নষ্ট হয়েছে বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নেই বিদ্যুত, নেই পর্যাপ্ত খাবার। পানি প্রবেশ করার কারণে চুলা জ্বালানোর সাধ্য নেই। আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমনিতে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে।
বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দেশের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। নিতে হবে মহাপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ। বন্যা প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সকলকে। পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে চলমান দীর্ঘদিনের পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন সব নদ-নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক তথা ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে ভারতের সাথে কার্যকর সংলাপের মাধ্যমে উপযুক্ত সময়ে পানি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনের সময় পানি না দেওয়া, বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ার যে মানসিকতা তা থেকে বেরিয়ে আসতে ভারতকেই উদ্যোগী হতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ন্যায়সংগত এবং কার্যকর চুক্তিই আমাদের দেশকে বছর বছর বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া দেশের বহু নদী ড্রেজিং এর অভাবে ভরাট ও দখলের কারণে ছোট হয়ে আসছে। ফলে বাড়তি পানি দু’কূল ছাপিয়ে জনপদে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরী। প্রভাবশালীদের খপ্পর থেকে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। আইনের আওতায় এনে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। নিয়মিত ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
যা বলছিলাম, সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যায় দুর্ভোগে পড়া মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরিভিত্তিতে শুকনো কিংবা রান্না করা খাবার সরবরাহ করতে পারলে সেটাই হবে কাজের কাজ। কারণ, রান্না করা কিংবা রান্নার উপযোগী পরিবেশ কোনটাই এখন আর অবশিষ্ট নেই। মানুষকে বাঁচাতে হবে। সরকার এবং সামর্থ্যবান মানুষসহ সবাইকে যার যেভাবে সম্ভব সিলেটের বন্যাক্রান্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বিদ্যুতকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে বিদ্যুতসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে। ফলে যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে উপদ্রুত এলাকার জনসাধারণকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যেতে হবে। অন্তত মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
জানা গেছে, আজ একদিনেই পানি যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মানুষের অসহায়ত্ব চরমে পৌঁছতে পারে। সেখানকার বন্যা দুর্গত মানুষ বলছেন, এ ধরণের বন্যা তারা অনেকে জীবনেও দেখেননি। এজন্য যেভাবেই হোক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং বন্যা পরবর্তি অবস্থা থেকে উত্তোরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহস দিতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উৎরে যেতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
ইতিহাসের নজিরবিহীন বন্যার কবল থেকে সিলেট সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হলে সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দুর্ভোগে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ান। সাহয্যের হাত বাড়ান।
লেখক: কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম, শিক্ষক ও কলামিস্ট