বাংলাদেশের বিপর্যয়কর বন্যার পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আর সেটিই প্রভাব ফেলছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃষ্টিপাতের ধরনে। ভবিষ্যতে এই বৃষ্টিপাত আরও অনিশ্চিত এবং প্রবল হবে বলেও সাবধান করেছেন তারা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে জানানো হয়, গত সপ্তাহের ভারি বর্ষণের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা আছে তা পরিমাপ করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনই নিশ্চিত যে, গরম বাতাসের কারণে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে। এই বাতাস তুলনামূলক বেশি জলীয় বাষ্প সঞ্চয় করতে পারে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটেরোলোজির জলবায়ু গবেষক রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে যে মৌসুমি বাতাস প্রবেশ করে তা প্রচুর পরিমাণে আদ্রতা নিয়ে আসে। এখন আমরা যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত দেখতে পাচ্ছি, তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে।
এল নিনো-লা নিনা এবং ভারত মহাসাগরের ডাইপোল প্যাটার্নে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এই পদ্ধতিটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গত কয়েক দশক ধরেই এই মৌসুমি বাতাসের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসছে। ১৯৭৬ সাল থেকেই বাংলাদেশে প্রতি বছর ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোল বলছেন, এ কারণে আগে যেমন পুরো বর্ষা কালজুড়ে হালকা বা মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হতো, এখন আর তা হচ্ছে না। এখন দীর্ঘ সময় বৃষ্টিহীন থাকার পর একসঙ্গে ভারি বর্ষণ দেখা যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হয় তখন একটানা কয়েক ঘণ্টা বা দিন জুড়ে পানি ঝড়তে থাকে।
এবারের বন্যায় আটকা পড়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তাদেরকে ছোট নৌকায় করে সাহায্য ও ত্রান পৌছে দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এখন পর্যন্ত এই বন্যায় ৬৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণে বাংলাদেশের নদীগুলো উপচে পরে আসেপাশের এলাকা প্লাবিত করেছে। ভারতের আসাম রাজ্যেও ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে কয়েক দিন আগেই। সেখানে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম দিকেই রয়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩৫ লাখ বাংলাদেশি বন্যা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই বন্যা বাংলাদেশের কৃষি, অবকাঠামো এবং নিরাপদ পানির সরবরাহে জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী আন্ডার্স লেভারম্যান বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলো বৃষ্টি না হওয়ার কারণেও ভুগছে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণেও ভুগছে। তাদের দরকার স্থিতিশীল বৃষ্টিপাত। অতীতে সেরকমই ছিল। কিন্তু এখন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থাটি হুমকির মুখে পড়েছে।