প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সরকারে বা বিরোধী দলে যেখানেই থাক, আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে থাকে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছিল। এরপর দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শত বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা দিয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। এটা মেনে চললে, কারো কাছে হাত পেতে চলবে না।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনে আজ বৃহস্পতিবার অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের শুরুতে ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের দল আওয়ামী লীগ সবসময়ই এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে। কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নামের সাথে যেমন স্বাধীনতা ও অধিকার জড়িত তেমনি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত হয়ে সংবিধান দিয়েছিলেন জাতির পিতা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দেয়। ১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পায়।’
এসময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাচাত্তরের ১৫ আগস্ট আমরা কেবল জাতির পিতাকে হারাইনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হয়েছিল। জয়বাংলা স্লোগান নির্বাসিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ২১ বছর পর ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার সরকারে আসে। সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’
প্রধানমন্ত্রী সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুল ধরে বলেন, ‘শুধু উন্নয়নশীল দেশ নয়, আমি ২১০০ সালের ডেল্টাপ্লান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। রুখতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ঝড় বৃষ্টি, বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি- যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পড়েছে এবং মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছে। এবারের সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যায়ও সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গিয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহায্য করেছে। এটাই আমাদের আদর্শ। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগের অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা করার অধিকার পেয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। সেটাও গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা করেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারো কাছে হাত পেতে চলবে না। চলবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে।