বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ফরেন পলিসি নিউজে সোমবার (২০ জুন) প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেন, দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে কীভাবে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে কাজ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রবন্ধে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দারিদ্র্যের দায় বাংলাদেশের মানুষের নয়, প্রচলিত এই ধারণাকেই নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মেধা বা ইচ্ছেশক্তির অভাব নয়, বরং সম্পদের অপ্রতুলতাই তাদের দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। অন্য যেকোনো জায়গার মতোই বাংলাদেশের মানুষ বন্দি হয়ে ছিল দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে। কিন্তু অবস্থারও পরিবর্তন সম্ভব। আর সেটা বাংলাদেশেই হয়েছে। দারিদ্র্যের বন্দিদশা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার কর্মযজ্ঞ চলছে। এর মধ্যে অন্যতম কার্যকর একটি পদক্ষেপ হচ্ছে ১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় সে বছরই দেড় লাখের বেশি গৃহহীন পরিবার পেয়েছে আশ্রয়। সেই সাথে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন, রাস্তা নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকল্পনা পরিকল্পনার ফলে মানুষ পেয়েছে গবাদিপশু পালন, খামার করা, ডিজিটাল লেনদেনের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় কয়েক বছরে ঘর পেয়েছে প্রায় ৩ লাখ পরিবার।
জয় বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্প বদলে দিয়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবন। পুরুষ নিয়ন্ত্রিত অতীতের সমাজ ব্যবস্থা থেকেও উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও আছে সমান সম্পত্তি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘরের মালিকানায় পুরুষের পাশাপাশি সমান অধিকার আছে নারীরও। একটি আধুনিক ও গতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জাগরণে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘জেন্ডার গ্যাপ সূচক ২০২১’ অনুসারে, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সেই সাথে, নারীদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সরকারের অঙ্গীকারের ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও সমৃদ্ধ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় আরও বলেন, বাংলাদেশে গত ২৪ বছরে দারিদ্র্য হার কমেছে ২৭ শতাংশ। অতি দারিদ্র্য হার ১০ বছরে কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এই সাফল্যকে ‘দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত বিশ বছরে ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালে বিশ্বের মাঝে ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে ধারণা করেছে এইচএসবিসি ব্যাংক।
দেশের সকল প্রান্তের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়েছে উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, উদ্বোধন হতে যাচ্ছে নিজ দেশের অর্থে নির্মিত পদ্মা সেতু; যে মেগাপ্রজেক্টের মাধ্যমে এক হতে পারবে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠী। পদ্মাসেতুর ফলে প্রায় ২ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকায় চলছে মেট্রোরেল এবং বেশ কয়েকটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ।
জয় বলেন, কেবল পোষাক শিল্পের ওপরই এখন নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। বহুমাত্রিক আর্থিক খাতের কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে মাথাপিছু আয় এখন বাংলাদেশের বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। পশ্চিমের কাছে এক সময়কার ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র জন্য এ এক দারুণ ঘুরে দাঁড়ানো। মূলত, সবচেয়ে দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে এ বছরই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।