অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বড় ধরনের কাগজ সংকটের মধ্যে পড়েছে পাকিস্তান। এতে চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করেছে পাকিস্তান পেপার অ্যাসোসিয়েশন।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এএনআই বলছে, কাগজ সংকটের কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি হলেও পাকিস্তানে বর্তমান সংকট দেশটির সরকারের ভুল নীতি এবং স্থানীয় কাগজ শিল্পের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে তৈরি হয়েছে।
অল পাকিস্তান পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিন্টিং গ্রাফিক আর্ট ইন্ডাস্ট্রি (পিএপিজিএআই) এবং কাগজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থা দেশটির শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ড. কায়সার বাঙ্গালীর সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে তারা সতর্ক করে বলেন, কাগজ সংকটের কারণে আগামী আগস্ট মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পৌঁছানো যাবে না।
পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দেশে কাগজের তীব্র সংকট চলছে। এছাড়া কাগজের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। আর দিন দিন এর দাম আরও বাড়ছে। এমনকি প্রকাশকরাও তাদের বইয়ের দাম নির্ধারণ করতে পারছেন না। আর এই কারণে সিন্ধ, পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুন শিক্ষাবর্ষ উপলক্ষে পাঠ্যপুস্তক ছাপতে পারবে না।
পাকিস্তানের কলামিস্ট আয়াজ আমির দেশের ‘অযোগ্য এবং ব্যর্থ শাসকদের’ কাছে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার প্রশ্ন, তারা কীভাবে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করবেন যখন ইসলামাবাদ আগের ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে ঋণ নেওয়ার দুষ্ট চক্রে আটকা পড়েছে।
পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দুনিয়া ডেইলিতে লেখা একটি কলামে আয়াজ আমির বলেছেন, আমরা আইয়ুব খান , ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং মোহাম্মদ জিয়া-উল-হকের শাসন দেখেছি। এসব স্বৈরশাসকদের মধ্যে একটি জিনিসের মিল ছিল। আর তা হলো- সমস্যা সমাধানের জন্য ঋণ নেওয়া এবং এরপর আগের ঋণ পরিশোধের জন্য আরও ঋণ নেওয়া।
তিনি বলছেন, ঋণ নেওয়ার এই চক্রটি এখনও চলছে এবং পাকিস্তান এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে কেউই আর দেশটিকে আর ঋণ দিতে রাজি নয়।
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কাতেও কয়েক মাস আগে কাগজের সংকট দেখা দেয়। ফলে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। এমনকি ছাপানো বন্ধ হয়ে যায় সংবাদপত্রও।
শ্রীলংকার মতো পাকিস্তানেও অর্থনীতির বড় সংকট হয়ে উঠেছে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন উল্লম্ফন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ১১ শতাংশে।
চীন, সৌদি আরব এবং কাতার থেকে নেওয়া ব্যাপক ঋণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩০ বছরের জন্য ১৩টি ঋণ নিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। এ সব ঋণ নিয়ে তৈরি করা বেশিরভাগ প্রজেক্ট ঋণের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার জন্য মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি