প্রকৃতির দেওয়া-নেওয়ার চক্রে বিশ্বাস করতেন মেক্সিকোর আদিবাসীরা। তাই অভিনব উপায়ে কাজে লাগাতেন মল-মূত্র।
তবে আধুনিক যুগেও কিছু মানুষ সেই ঐতিহ্য কাজে লাগিয়ে জৈব পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন করছেন। এদেরই একজন মেক্সিকোর স্থপতি সেসার আনিয়োর্ভ। পূর্বপুরুষদের জ্ঞান আবার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন তিনি।
স্থপতি হিসেবে পানিকে মল-মূত্রের বাহক হিসেবেই গণ্য হতে দেখেছেন সেসার আনিয়োর্ভ। আর সেটাই তাকে নাড়া দিয়েছে। তিনি পানি সম্পর্কে একটি প্রচলিত ধারণা বদলে দিতে চান।
সেসার আনিয়োর্ভ বলেন, আমি আসলে আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান আবার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। তারা কিন্তু মলকে মোটেই নোংরা হিসেবে দেখতেন না। বরং জমিতে ফেরত দেওয়ার উপকরণ হিসেবে গণ্য করতেন।
স্যানিটারি সিস্টেমের ক্ষেত্রে সাধারণত নিজস্ব মলের দিকে নজর দিতে হয়। শুধু ফ্লাশ করে বেরিয়ে যাবার জো নেই। ড্রাই টয়লেটের মাধ্যমে পানির দূষণ মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মেক্সিকোর এই স্থপতি।
জানা গেছে, মেক্সিকোর আদিবাসীরা মানুষের মল ও অন্যান্য জৈব বর্জ্য জমা করে কৃষিকাজের জন্য চিনাম্পা নামের এক ধরনের কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টি করতেন। মেক্সিকো সিটির মতো বিশাল শহরের উপকণ্ঠে এমনই এক চিনাম্পায় সেই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে চান কৃষক লুসিও উসোবিয়াগা।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, মানুষ কীভাবে আরো প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারে, চিনাম্পা তার অন্যতম বিরল দৃষ্টান্ত। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাঁচার সুন্দর উদাহরণ এটা।
তিনি শহরের উপকন্ঠে ‘আর্কা তিয়েরা’ নামের এক রিজেনারেটিভ কৃষি প্রকল্প চালাচ্ছেন। সেখানে প্রকৃতির সঙ্গে যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যের মাধ্যমে জৈব খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। মেক্সিকো সিটির অনেক রেস্তোরাঁয় সেই কৃষিপণ্য বিক্রি করা হয়।
লুসিও উসোবিয়াগা বলেন, শুকনো কম্পোস্টিং টয়লেট ছাড়া এখানে চলে না। চিনাম্পাগুলো প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ এবং কলের পানিও নেই। লুসিও’র কাছে সেখানে জমা মল মোটেই বর্জ্য নয়, বরং এক সম্পদ।
তিনি বলেন, জমি থেকে আমরা যে খাদ্য পাই, আমাদের তা ফিরিয়ে দিতে হবে। তা না হলে ভারসাম্য নষ্ট হবে। কীটপতঙ্গ ও ঘাটতি দেখা দেবে। উদ্ভিদের সম্পূর্ণ পুষ্টির জন্য সব অবশিষ্ট অংশ তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে লুসিও উসোবিয়াগাসহ অন্যান্য কৃষকরা শুধু ফলের গাছের গোড়ায় মল দিয়ে তৈরি কম্পোস্ট সার দিতে চান। রোগের জীবাণু, হরমোন ও ওষুধের অবশিষ্ট অংশ নিরাপদে পুরোপুরি দূর করতে পারলে শাকসবজির ক্ষেতেও সেই সার দেওয়া হবে।
এ বিষয়গুলো জেনেশুনেই কৃষিপণ্য কেনেন টোমাস ভিলানুয়েভার গ্রাহকরা। তিনি এমন পদ্ধতির কদরও করেন। বলেন, সমাজে মলের ভাবমূর্তি বড়ই খারাপ। কিন্তু আমরা জানি যে মল কম্পোস্টিংয়ের মাধ্যমে স্যানিটেশন সম্ভব। আমাদের এখানে একটা প্রবাদ রয়েছে– মল দিলে ফসল কখনো নষ্ট হয় না। এ হলো দেওয়া-নেওয়া, খাওয়া ও মলত্যাগের এক চক্র। অন্য জায়গায় যা ঘৃণা ও ভয়ের কারণ, আমাদের দেশে তা একেবারেই স্বাভাবিক।