মাদককে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সরকারের এসডিজি সফল করা সম্ভব হবে না। এজন্য সকলকে মাদকের বিস্তাররোধে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল ইসলাম। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধপাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহবান জানান।
বুধবার (২৯ জুন ) বেলা ১১টায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ধানমন্ডিস্থ প্রধান কার্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকের ক্ষেত্রে সাধারণ তিন ভাবে কাজ করে থাকে। হার্ম রিডাকশন, সাপ্লাই রিডাকশন ও ডিমান্ড রিডাকশন। মানুষকে মাদক ও এর ক্ষতির সম্পর্কে জানানোর জন্য আমরা কাজ করছি। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমরা সভা সেমিনার করছি। আগামীতে এটি ইউনিয়ন পর্যায়েও করা হবে। এর সঙ্গে আগামীতে আমরা মাদকের বিস্তার রোধে আমাদের কার্যক্রমে পারিবারিক বন্ধন জোরদারের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেবো।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনএইডস’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা.সায়মা খান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ও ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক ডাঃ এস.এম শহীদুল ইসলাম (পিপিএম) এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ইউএনওডিসি’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর মুহাম্মাদ নাহিয়ান।
স্বাগত বক্তব্যে ইকবাল মাসুদ বলেন, মাদক প্রভাব কমাতে পরিবারের গুরুত্ব অত্যাধিক। মাদক যেহেতু একটি রোগ সেহেতু এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে। তবে আমাদেরকে আগে ভাবতে হবে এ রোগের বিস্তার কিভাবে রোধ করা যায়। সন্তানদের প্রতি তাদের অভিভাবকগণ যদি যথেষ্ট সচেতন হন তবে একটি সন্তান সহজে মাদকাসক্ত হবে না। এজন্য আমাদেরকে পারিবারিক বন্ধনের প্রতি জোর দিতে হবে।
পুলিশ সুপার পরিচালক ডাঃ এস.এম শহীদুল ইসলাম (পিপিএম) বলেন, মাদক এক ধরণের ব্রেইন ডিজিজ। অন্যান্য রোগের মতো এ রোগের ভালো হবার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ জরুরী। সাধারণত আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মাদকে আসক্ত হয়ে অপরাধকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়। তবে বাংলাদেশ পুলিশ এবার উদ্যোগ নিয়েছে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদেরকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার প্রতি। কারণ এতে সমাজ থেকে কিছুটা হলেও মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা অপরাধ কমানো সম্ভব হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শহীদুল আলম বলেন, অর্থনীতির সূত্র অনুসরণে, যেখানে ডিমান্ড রয়েছে, সেখানেই সাপ্লাই থাকবে। সেজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ আপনারা মাদকের ডিমান্ড কমানো প্রতি বেশি জোর দিন। তাহলে ডিমান্ড কমে গেলে মাদকরে প্রকোপও অনেকাংশেই কমে যাবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ডা. ফারজানা রহমান দিনা, সহযোগী অধ্যাপক, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা এবং ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।
সভায় বিভিন্ন মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিগন ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ঢাকা ও গাজীপুর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রিকভারীগন অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ১৯৯০ সাল থেকে মাদকবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে গাজীপুরে, যশোরে ও মুন্সিগঞ্জে মাদকনির্ভরশীল পুরুষদের জন্য এবং ঢাকায় মাদকনির্ভরশীল নারীদের জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয় মাদকবিরোধী কমিটির সদস্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন একাধিকবার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের অবদান স্বরুপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পুরুস্কার পেয়েছে। উক্ত কেন্দ্রগুলো থেকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে অনেক পুরুষ ও নারীগণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে আছেন।
সূত্রঃ প্রেস রিলিস