স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পরপরই সুফল পেতে শুরু করেছেন মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। বন্দরকেন্দ্রিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর হওয়ায় মোংলা থেকে রাজধানীর দূরত্ব নেমে এসেছে মাত্র ১৭০ কিলোমিটারে, যার ফলে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকায়। এতে প্রতিবছর বেঁচে যাবে তাদের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি পদ্মা সেতু চালুর পর ভোগান্তি কমায় ঈদআনন্দ বয়ে যাচ্ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ট্রাক-লরি ড্রাইভার ও হেলপারদের মধ্যেও।
এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের (সিঅ্যান্ডএফ) সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি আশীর্বাদ। পদ্মা সেতু চালুর পর পরই আমাদের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আমরা প্রায় চার শতাধিক ব্যবসায়ী আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত এই মোংলা আন্তর্জাতিক বন্দরকে কেন্দ্র করে। আগে মোংলা বন্দর থেকে ঢাকায় আমাদের পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগত কমপক্ষে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা। অথচ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবদানে এখন লাগছে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। এর ফলে শুধুমাত্র সড়কপথেই আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচার পাশাপাশি বছরে আর্থিকভাবে বেঁচে যাবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই পদ্মা সেতুর সুফল পেতে শুরু করেছি আমরা। এ ছাড়া সময় বেঁচে যাওয়ার কারণে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা এ ব্যবসায়ী নেতার।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, সেতু উদ্বোধনের পর আমাদের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা শতাধিক গাড়ি মোংলা বন্দর থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে গেছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের শুধুমাত্র জ্বালানি তেল বাবদ বছরে আনুমানিক প্রায় ১২ কোটি টাকা বাঁচবে। বারভিডার প্রায় ৩শ সদস্য মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। কম সময়ে গাড়ি খালাস ও রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে বেশি পছন্দ করেন। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বন্দরে গাড়ি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহও বেড়েছে কয়েকগুণ।
মোংলা বন্দর এলাকার পরিবহন ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন রোববার বিকালে কোম্পানির মাল নিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছি। এর আগে ঢাকায় রওনা দিলে কখন পৌঁছাব তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মাওয়া ঘাটে সিরিয়াল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে, এমনকি দুই থেকে তিন দিন পর সিরিয়াল পেতাম। তার ওপর ফেরির লোকজনদের ম্যানেজ করাসহ নানা ঝামেলায়ও পড়তে হতো। এখন আর সে সমস্যা নেই, এখন রওনা দিয়ে কখন ঢাকা পৌঁছাব তার নিশ্চয়তা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি আমার পরিবারের কাছে কখন পৌঁছব সে নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব।
এ ছাড়া মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ইতোমধ্যেই এর সুফল পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেড়েছে আমদানি-রফতানির গতি। এই ধারাবাহিকতায় বন্দরের আয় বাড়বে বেশ কয়েকগুণ, যা এই বন্দরের অর্থনৈতিক ভিতকে করবে সুদৃঢ়।