ভারতের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার (১ জুলাই) কলকাতায় ইসকনের রথ উৎসবে এসে এমন কথা বলেন তিনি। নিজের পছন্দের বিজেপি বিরোধী সম্মিলিত জোটের প্রার্থী যশবন্ত সিনহার বদলে তৃণমূল নেত্রীর বিজেপি প্রার্থীকে ‘কার্যত সমর্থন’ দেওয়া নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে।
এদিন মমতা বলেন, ‘আগে থেকে বিজেপি যদি জানাতো যে, একজন আদিবাসী নারীকে তারা প্রার্থী করছে, তাহলে আমরাও (ভেবে দেখার) চেষ্টা করতাম। নারীদের প্রতি আমার একটা বিশেষ ভাবাবেগ আছে। রাজনীতিতে অবশ্য পুরুষ এবং নারী; সবাই আছেন। (আমার ক্ষেত্রে) ওরা হয়তো সেই বিষয়ট বিবেচনা করে না কখনও। সেটা নয়; দেশের স্বার্থে আমরা ১৬-১৭টা বিরোধী দল মিলে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। বৃহত্তর স্বার্থে একজন প্রার্থী হলে ভালো হতো। কিন্তু বিজেপির যখন ফোন এসেছিল, তখন ওরা শুধু আমাদের পদপ্রার্থী জানতে চেয়েছিল। ওদের প্রার্থীর বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
সঙ্গে তিনি এও দাবি করেন, ‘মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা বদলের পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনা বেশি।’
মমতার এই মন্তব্যের পরই কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূল-বিজেপির আঁতাত উসকে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে হয়তো কোনও চাপ এসেছে। হয়তো মোদি দিদিকে বুঝিয়েছেন, এতে আপনার ভালো হবে। না হলে দিদির এই পাল্টিবাজি করার তো কোনও মানে হয় না। সব জেনে শুনে তিনি প্রার্থী দিয়েছিলেন।‘
বিজেপির পক্ষ থেকে প্রত্যাশিতভাবেই মমতার এই মন্তব্যের পর কিছুটা হালকা সুরই শোনা গেছে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে বিজেমূল (বিজেপি-তৃণমূল) তত্ত্ব আনতেই পারেন কেউ কেউ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটির টান বোঝেন, তাই (এমন কথা) বলেছেন। রাজ্যে আদিবাসী ভোটের কথাও তিনি বোঝেন।’
আর এ নিয়েই আবারও একবার বিজেপি–তৃণমূল আঁতাতের গন্ধ পাচ্ছেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা থলের বিড়াল আরও একবার বেরিয়ে পড়লো। আমরা বহুদিন ধরেই বলছি, মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধী দল হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট নয়, দ্বিচারিতায় ভোগেন। আজ কী বললেন উনি!‘
মমতাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের থেকেও বেশি উদ্যোগী, এমন একটি ভাব করে বেঠিকভাবে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক ডাকলেন। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক হলো, মনোনয়ন জমা পড়লো। প্রার্থী তৃণমূলের লোক বলে পরিচিত। আজ তিনি বলছেন, বিজেপি যদি আগে বলতো… তাহলে তিনি বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারতেন। এটা স্পষ্ট হয়ে গেল, উনি বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল নন। বরাবর আমরা বলছি, এটি আজ আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।’