কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার মারা গেছেন। সোমবার সকালে কলকাতার সুপার স্পেশালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। কিডনি জনিত সমস্যা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই প্রবীণ পরিচালক। হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন তিনি। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তরুণ মজুমদারের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের পরিমান অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে মাঝেমধ্যেই আচ্ছন্ন ভাব দেখা যেত তার। মস্তিষ্কে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতাও কিছুটা কমে যায়। ফুসফুসেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর এই বিষয়গুলি নিয়েই চিন্তায় ছিলেন চিকিৎসকরা। সেই সাথে তার খাওয়ার সমস্যা শুরু হয়। সেই জন্য তাকে রাইস টিউব দিয়ে তাকে খাওয়ানো হচ্ছিল। তার চিকিৎসায় হাসপাতালের চিকিৎসক সোমনাথ কুন্ডু, সরোজ মন্ডল, সৌমিত্র ঘোষ এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছিল।
মাঝে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে সকলেই আশা প্রকাশ করেছিলেন যে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে জিতে ফিরবেন পরিচালক। কিন্তু গত শনিবার হঠাৎই করেই তার শরীরের অবস্থার অবনতি হয় তার। রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। ডায়ালাইসিসও করতে হয়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিকার ছায়া নেমে এসেছে বাংলা তথা ভারতের চলচ্চিত্র জগতে। এসএসকেএম হাসপাতালে ছুটে যান রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
এদিকে, তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক শোকবার্তায় তিনি লেখেন বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ (সোমবার) কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ মজুমদার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গেছেন। তার ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, শহর থেকে দূরে, পথভোলা, চাঁদের বাড়ি, আলো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।
১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তরুণ মজুমদারের স্ত্রী সন্ধ্যা রায়ও একজন অভিনেত্রী।
উল্লেখ্য, কেমেস্ট্রির ছাত্র হলেও শুরু থেকেই ফিল্মমেকিংয়ের উপর তীব্র আকর্ষণ ছিল তরুণের। শচীন মুখার্জি ও দিলীপ মুখার্জির সঙ্গে মিলে ‘যাত্রিক’ নামে একটি দল তৈরি করে চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ শুরু করেছিলেন তরুণ মজুমদার। এই দলের প্রথম ছবি উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘চাওয়া পাওয়া’। ১৯৬২ সালে ‘কাঁচের স্বর্গ’ ছবির জন্য প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই পরিচালক।
এরপর পলাতক, নিমন্ত্রণ, ফুলেশ্বরী, কুহেলি, আপন আমার আপন, বালিকা বধূ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, দাদার কীর্তি, ভালোবাসা ভালোবাসা, আলো, সংসার সীমান্তে, গণদেবতাসহ একাধিক ছবি তৈরি করেছিলেন যা প্রশংসার দাবি রাখে।
তার ঝুলিতে রয়েছে চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি বিএফজেএ, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ১৯৯০ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত শেষ ছবি ‘ভালোবাসার বাড়ি’, ২০১৮ সালে এটি মুক্তি পায়।