বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এর হাতে গ্রেফতার হওয়া পি কে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিব শঙ্কর হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে ১৫ দিনের জেল হেফাজত দেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২০ জুলাই ফের তাদের আদালতে তোলা হবে।
১৪ দিনের জেল হেফাজত শেষে আজ মঙ্গলবার অভিযুক্ত প্রত্যেককেই কলকাতার নগর দায়রা আদালতের বিশেষ সিবিআই কোর্ট-৩ এ তোলা হলে বিচারক জীবন কুমার সাধু এই নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে নতুন নতুন তথ্য পেতে কারাগারে গিয়েও অভিযুক্তদের জেরা করবেন ইডির কর্মকর্তারা। পিকের ভাই প্রাণেশ হালদারের জামিনের যে আবেদন আদালতে করা হয়েছিল, এদিন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, অন্যদিকে বাকি পাঁচ অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত।
এদিকে, ইডি সূত্রে খবর আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারে তারা।
এ ব্যাপারে এদিন ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই মামলায় চার্জশিট জমা পড়বে। তদন্তের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামও এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
ওই প্রভাবশালীদের মধ্যে কোন দেশের নাগরিক সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আইনজীবী বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় প্রভাবশালীদের নাম নিয়েই আমরা চিন্তিত। বাংলাদেশের নাম আসলেও এই মামলায় তাদের নাম নেই।
বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বা তদন্তকারী এজেন্সিগুলোর পক্ষে ইডি বা আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। আদালতে পিকের ভাই প্রাণেশ হালদারের আগাম জামিন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, অন্যদিকে বাকিদের জামিন খারিজ করে দেয় আদালত।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালায় পি কে হালদারের সাথেই গ্রেফতার করা হয় তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারকে।
ইতিমধ্যেই পিকে হালদারসহ গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনের বিরুদ্ধেই ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ (PMLA) এবং ‘দ্যা প্রিভেনশন অব কোরাপশন অ্যাক্ট’ এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই আদালতের পক্ষে কয়েক দফায় ইডি রিমান্ড এবং জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়ার পর পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে, অন্যদিকে মহিলা অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে। অভিযুক্তদের জেরা করে ইতিমধ্যেই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের একাধিক শহরে।
এদিকে, ওই মামলায় পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী স্বপন মৈত্র’এর স্ত্রী পূর্ণিমা মৈত্রকে জেরা করেছে ইডির কর্মকর্তারা। গত বুধবারই ইডির পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কার্যালয়ে আসনে পূর্ণিমা মৈত্র। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জেরা করা হয় বাংলাদেশের দুদকের এজহারভুক্ত আসামি পূর্ণিমা মৈত্রকে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, পূর্ণিমার পাসপোর্ট, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংকের পাস বই, ইনকাম ট্যাক্স সম্পর্কিত নথি, বারাসাতে থাকা তাদের একটি ফ্ল্যাটের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ একাধিক নথিপত্র।
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে উঠা অর্থপাচারের সাথে পূর্ণিমার আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কিনা, থাকলেও তা কোন পর্যায়ের, পূর্ণিমার নাগরিকত্ব, মূলত এসবই খতিয়ে দেখতে চায় ইডির কর্মকর্তারা। আগামী ৬ জুলাই তাকে ফের ইডির দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পূর্ণিমাকে।
অর্থ-পাচার সংক্রান্ত মামলায় ইডির কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছেন পিকে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে অতসী মৃধা এবং তার স্বামী সঞ্জীব হাওলাদারকেও। গত সপ্তাহেই তাদেরকেও পৃথক ভাবে জেরা করে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।