সরকার সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মোলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে।
দেশজুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রীর স্বীকারোক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনশুমারি প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে এবং বিশ্ব জনমত বিভ্রান্ত করার জন্য দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এ ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে।
‘ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সব তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।’
সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, ইডিএফ নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার ফলে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪.০২ বিলিয়ন ডলার। এ ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এ ধরনের ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ন্তভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, সরকার অর্থনীতির সব নিয়মকানুন ভঙ্গ করে রিজার্ভের সব বিধিবিধান ভঙ্গ করে শুধু নিজেদের ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। এ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।