প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাসসহ বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিবহনব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুতের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।
গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে করোনার একটা অভিঘাত, তার ওপরে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বেই যেমন তেলের দাম বেড়েছে, অনেক দেশেই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। বিদ্যুৎ আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। ডিজেল, তেল, এনএলজির দাম বেড়েছে। কয়লা এখন পাওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পরিবহনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আগের মতো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। শুধু আমাদের দেশে না, প্রত্যেকটা দেশেই এখন জিনিসের ঘাটতি। সেখানে আমরা যদি একটু সাশ্রয় করে চলি, মিতব্যয়ী হই এবং নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়টা বাড়াতে পারি তাতে যে কোনো সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারই যেন সঞ্চয়মুখী হয়, যে আমরা নিজেরা কিছু করব। তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে কিন্তু দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশে যাতে সে পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, এ জন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাধার যেন খালি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, প্রতিষ্ঠানভিত্তিকও যেখানে যতটুকু খালি জায়গা, যে যা পারবেন কিছু উৎপাদন করবেন। উৎপাদন করে অন্তত নিজেদের খাদ্যটা নিজেরা জোগাড় করার চেষ্টা করা, যাতে বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। উদ্বৃত্তটা বিক্রি করে যাতে লাভবান হতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটা সবাইকে নিতে হবে। করোনা সংক্রমণ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার একটু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে আমরা টিকা দিচ্ছি। টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুস্টার ডোজটাও নিতে হবে। অনেকেই বুস্টার ডোজ নিচ্ছে না। সাধারণ জনগণ একটু পিছিয়ে থাকে। সেই ব্যাপারেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব, যাতে প্রত্যেকে বুস্টার ডোজটা নেয়। যাতে প্রাদুর্ভাব আর বাড়তে না পারে।
কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না : গতকাল সকালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে কেউ কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবেন না। সব ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। এ সময় তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতিটি মানুষের উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে কুসিকের নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নবনির্বাচিত ৩৬ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কুসিক নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসে এটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অতীতে আর দেখা যায়নি। জনগণের ভোটের অধিকার যেন নিশ্চিত থাকে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। একদিকে ভোটের অধিকার অপরদিকে বাঙালি জাতির সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কাজ করে গেছে। ৭১ সালের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষ ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে সেটা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক অধিকারের মাধ্যমেই মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করি। আমরা চাই দেশ সব সময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে উঠবে। সব ধর্মের স্বাধীনতা বাংলাদেশে থাকবে যেটা আমাদের পবিত্র কোরআন শরিফে বলা আছে। কেউ কারও ধর্মের অনুভূতির ওপর আঘাত করবে না বা ধর্ম পালন করায় বাধা দেবে না। বাংলাদেশ সে চেতনায় বিশ্বাস করে। দেশে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করি, আমরা লক্ষ্য করি একেবারে তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে যারা কুসিক নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা যারা নির্বাচিত হয়েছেন মনে রাখবেন, আপনারা জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ ভোট দিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছে। যারা ভোট দিয়েছে আর যারা আপনাদের ভোট দেয়নি আপনারা সবার প্রতিনিধি। কে ভোট দিয়েছে আর কে ভোট দেয়নি সেটা বিষয় না।
আপনাদের দায়িত্ব প্রতিটি এলাকায় উন্নয়ন, প্রতিটি মানুষের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যে কাজ করা। যখন আমি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি তখন আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কে ভোট দিয়েছে, কে ভোট দেয়নি সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় না। প্রতিটি মানুষের উন্নয়ন আমার লক্ষ্য। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে, প্রত্যেকটি মানুষের যাতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়, প্রতিটি এলাকায় যাতে সমান উন্নয়ন হয়, সেটি নিশ্চিত করা। আমি মেয়র, কাউন্সিলরদের বলব, উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে গিয়ে ভাববেন না কত কমিশন পাওয়া যাবে। এই চিন্তা যেন না থাকে, মানুষ কতটুকু উপকৃত হবে রাষ্ট্র কতটুকু লাভবান হবে সেটা মাথায় রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রতিনিয়তই খাদ্য দ্রব্যসহ প্রতিটি জিনিসের দাম প্রতিটি দেশেই বাড়ছে। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। ভোজ্য তেল, সারের দাম বেড়েছে। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছি, কত দেব। নিজেদের যেটুকু জমি আছে ব্যবহার করবেন। এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখবেন না। জমি যেন পড়ে না থাকে, নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরাই খাব।