তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
বুধবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে শেখ জামাল ও রোজী জামালের নামে দুটি পৃথক ডরমেটরির উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানটি গণভবন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চুয়েট তিন প্রান্ত থেকে একযোগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
চুয়েট প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, চুয়েট ভিসি, চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ দশমিক ৭ একর জায়গায় দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ২২০ জনের প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিটিসিএল’র মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ আছে। ২০১৭ এর জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ এর জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন আইডিয়া। সেই সকল আইডিয়াকে বাস্তবায়নে রূপদান করার একটি ক্ষেত্র হবে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে এই ইনকিউবেটর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এদিকে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম-৬ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী এবং শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উপকারভোগী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
চুয়েটের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানান, শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ছয় ও চারতলা দুটি বহুমুখী প্রশিক্ষণ ভবন তৈরি করা হয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনে রয়েছে স্টার্টআপ জোন, ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্টর্মিং জোন, এক্সিবিশন সেন্টার, ই-লাইব্রেরি জোন, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ ও সভাকক্ষ। এ ছাড়া ব্যাংক ও আইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক কর্নার, সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, বিনোদনের ব্যবস্থা ও মিডিয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকবে।
চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিশ্বে তাক লাগিয়েছে চীন ও ভারত। চুয়েটে শেখ কামাল বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ১১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় পুরো কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের মধ্যে আছে ১০ তলা পর্যন্ত ডিম্বাকৃতির ইনকিউবেশন ভবন। এর প্রতি ফ্লোর ৫ হাজার বর্গফুট করে মোট ভবনের আয়তন ৫০ হাজার বর্গফুট। শেখ জামাল ও রোজি জামালের নামে নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে পৃথক দুটি চার তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি। প্রতি ডরমেটরিতে ৪০টি কক্ষ আছে। দুটি ভবনের মোট আয়তন ৪০ হাজার বর্গফুট। আরও আছে ৬ ছয় তলা মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন যার প্রতি ফ্লোর ৬ হাজার বর্গফুট করে মোট আয়তন ৩৬ হাজার বর্গফুট।