গবেষক দলের সদস্য নোমান বলেন, ‘যখন কোনো পিল পুরুষদের সেক্স হরমোনকে টার্গেট করে, তখন তাদেরও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকের ওজন বৃদ্ধি পায়, বিষণ্নতা দেখা দেয়। আবার অনেকের হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এসব কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নিতে পুরুষদের আগ্রহ কম। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নন-হরমোনাল পদ্ধতিতে পিল তৈরিতে জোর দিয়েছি।’
জন্ম নিয়ন্ত্রণে পিল খাওয়ার দায়িত্ব কেবল নারীর ওপর চাপিয়ে দেয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। গবেষকরা বলছেন, তারা এমন একটি পিল তৈরি করেছেন, যা খেতে হবে পুরুষকে। আর এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ৯৯ শতাংশ কার্যকারিতা পেয়েছেন তারা।
গবেষকদের দাবি, এই পিল টেস্টোস্টেরনকে টার্গেট করে না। ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা হতাশা সৃষ্টি করে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত তাদের এই পিল।
চলতি বছর মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে পিলটি। সফল হলে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প যেমন কনডমের ব্যবহার কিংবা ভ্যাসেকটমির মধ্য দিয়ে আর যেতে হবে না পুরুষদের।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোয় আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির চলতি বছরের বসন্তকালীন সম্মেলনে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই তথ্য উন্মোচন করেন।
তারা জানান, এটি পুরুষদের সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় এই সম্পর্কিত অন্য সব ওষুধ, যেগুলো ফার্মেসিতে পাওয়া যায়, তাদের ব্যবসায় ধস নামতে পারে।
গবেষক দলের সদস্য আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সাধারণত নারীরা যে ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করে থাকেন, সেগুলো তাদের সেক্স হরমোনে কাজ করে। বাজারে আমরা পুরুষের গর্ভনিরোধক পিলের ঘাটতি পেয়েছি।’
নোমান আরও বলেন, ‘যখন কোনো পিল পুরুষদের সেক্স হরমোনকে টার্গেট করে, তখন তাদেরও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকের ওজন বৃদ্ধি পায়, বিষণ্নতা দেখা দেয়। আবার অনেকের হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। এসব কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নিতে পুরুষদের আগ্রহ কম। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নন-হরমোনাল পদ্ধতিতে পিল তৈরিতে জোর দিয়েছি।’
এবার পুরুষের জন্য স্বল্পমাত্রার জন্মবিরতিকরণ পিল
এই নন-হরমোনাল গর্ভনিরোধক টার্গেট করে একটি প্রোটিনকে, যেটি রেটনোইক অ্যাসিড রিসেপ্টর আলফা নামে পরিচিত। তিনটি নিউক্লিয়ারবিশিষ্ট রিসেপ্টরের একটিতে পিলটি রেটিনোয়িক অ্যাসিড সরবরাহ করে।
গবেষকরা দেখেছেন, যে পুরুষ ইঁদুরের মধ্যে রেটনোইক অ্যাসিড রিসেপ্টর আলফা প্রোটিন দেয়া হয়েছে, সেটি বন্ধ্যা হয়ে গেছে। আরেকটি পরীক্ষায় তারা তিনটি রিসেপ্টরে একটি মুখে খাওয়ার পিল দিয়েছিলেন। আসলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে গবেষকরা এই চেষ্টা করেছিলেন।
এই পরীক্ষা চালাতে গিয়ে গবেষকরা ওয়াইসিটি৫২৯ নামের একটি যৌগ খুঁজে পান। এটি একাই রেটনোইক অ্যাসিড রিসেপ্টর আলফাকে প্রতিরোধ করতে পারে।
পরে তারা একটি পুরুষ ইঁদুরকে চার সপ্তাহ ধরে ওই পিল মুখে খাইয়েছিলেন। এক মাস পর তারা দেখতে পান, ইঁদুরটির শুক্রাণুর সংখ্যা অবিশ্বাস্যরকম কমে গেছে এবং তা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ওষুধ বন্ধের ছয় সপ্তাহ পর ইঁদুরটির শুক্রানু ফের উর্বর হয়ে ওঠে।