দেশের সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত নাম শরিফুল রাজ। ‘পরাণ’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। তাকে ঘিরে সিনেমা হল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া, সবখানে হইচই-উচ্ছ্বাস।
রেদওয়ান রনির পরিচালনায় প্রথম সিনেমা ‘আইসক্রিম’ দিয়েই নিজের জাত চিনিয়ে ছিলেন শরিফুল ইসলাম রাজ। এরপর তানিম রহমান অংশুর ‘ন ডরাই’য়ে অভিনয় করে দর্শকের ব্যাপক প্রশংশা কুড়ান। পান পরিচিতিও। চলতি বছর ওটিট প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘গুণিন’-এ ভিন্ন রূপে হাজির হন তিনি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছেন এবার। ‘পরাণ’ সিনেমার দুর্দান্ত অভিনয় করে এক টানে নিজের ক্যারিয়ারক যেন বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন এই তরুণ তুর্কী।
ঢাকা পোস্টকে রাজ জানিয়েছেন ছোটবেলা থেকেই সিনেমার পোকা তার মাথায়। সেই সাদাকালো টিভির সময় থেকেই সিনেমার প্রতি তার ভালোলাগা শুরু। একসময় প্রয়াত অমর সালমান শাহর বাড়ির পাশ দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন রাজ। প্রতি শুক্রবার তার কবর দেখতে যেতেন। সেসব অনুভূতিও মনের অজান্তেই তাকে সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
রাজ বলছিলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া। আমাদের ছোটবেলায় তো গ্রামে টেলিভিশনের সংখ্যা কম ছিল। প্রতি শুক্রবার সিনেমা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। বাড়ির উঠোনে উৎসবের মতো করে সবাই একসঙ্গে সিনেমা দেখতাম। বর্ডারের কাছে বাড়ি হওয়ায় ভারতের ডিডি ন্যানশালও সহজে দেখা যেতো। সেখানে প্রতি শনি ও রোববার হিন্দি সিনেমা হতো। সেটাও দেখতাম পরিবারসহ। সিনেমার তারকাদের ভিউ কার্ড কিনে কিনে জমাতাম। সেসব দিন, সেসব অনুভূতি কখনো ভোলার নয়।’
রাজ জানান, হলে গিয়ে তিনি প্রথম সিনেমা দেখেছেন ৩-৪ বছর বয়সে। অনেকটা বাবার কোলে বসেই। সিনেমাটি দেখতে বাবা-মা, চাচা-চাচিসহ পুরো পরিবার একসঙ্গে ট্রেনে করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লা এসেছিলেন। কুমিল্লা সেনানিবাসের পাশের হলে দেখা তার সেই সিনেমার নাম ‘সত্যের মৃত্যু নেই’। সেই সিনেমার নায়ক সালমান শাহ শিশু রাজের মনে দারুণ দাগও কেটেছিল।
ডিজিএফআই (সাবেক) বাবার কর্মসূত্রে সিলেটে থাকতে গিয়ে আরও প্রবলভাবে সালমান শাহকে অনুভব করেন রাজ। বলেন, ‘আমার স্কুল এবং কলেজ জীবন কেটেছে সিলেটে। প্রতি শুক্রবার আমরা দুই ভাই আব্বুর সাথে শাহজালাল মাজারে যেতাম। কোরআন তিলাওয়াত করতাম। ফেরার সময় প্রয়াত স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহর কবর দেখে আসতাম। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে ভাবতাম। সালমান শাহর বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করতাম। প্রতিবার যাওয়া-আসার সময় তার বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সিনেমায় তার চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবতাম। যেন অন্য এক জগতে হারিয়ে যেতাম। এসব বিষয় আমার ভেতর সিনেমার প্রতি আলাদা একটা ভাইব তৈরি করে। অভিনয়ের পাশপাশি সালমানের পোশাক, স্টাইলও বেশ ভালো লাগতো। এখনো লাগে। মনের অজান্তে হয়তো নানাভাবে তিনি আমার ভেতরেই বাস করেন।’
মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে সিনেমা নায়ক। তারপর চলে এসেছেন এতদূর। সিনেমায় নিজের যাত্রা কিংবা অর্জনের পেছনে রেদওয়ান রনির অবদানকে সবচেয়ে বড় করে দেখছেন রাজ। জানান, এখন মানুষ তাকে যতই ভালোবাসুক, যতই প্রশংসা করুক, স্টার-সুপারস্টার ডাকুক। সবকিছুর পেছনে রেদওয়ান রনির ভূমিকা। শুরুতে তার হাতটা মাথার ওপর ছিলো বলেই সিনেমা অঙ্গনে তিনি এতদূর আসতে পেরেছেন।
রাজ আরও জানিয়েছেন বাবা-মার সঙ্গে দুই ভাই এবং এক বোনকে নিয়ে তাদের সংসার। রাজের ভাই ঈশানও একজন মডেল। ছোট বোন গ্র্যাজুয়েট করছেন। দারুণ সুখী পরিবার তাদের। নিজের ইচ্ছার পাশাপাশি পরিবারের সহযোহিতায় তিনি একদূর আসতে পেরেছেন। আর বর্তমানে বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন স্ত্রী, চিত্রনায়িকা পরীমণির কাছ থেকে। সবার ভালোবাসা নিয়ে সিনেমা জগতে আরও আরও সাফল্যের সিঁড়ি পার হতে চান তিনি।