চরম অর্থনৈতিক সংকটে তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলংকার সরকারের পতন ঘটেছে। মূলত ঋণ খেলাপি হওয়ার পর থেকেই সংকট নেমে এসেছে শ্রীলংকার অর্থনীতিতে। শ্রীলংকা, লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম এবং জাম্বিয়া ইতোমধ্যেই ঋণ খেলাপির তালিকায় রয়েছে। বেলারুশও ঋণ খেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং কমপক্ষে আরও ডজনখানেক দেশ ক্রমবর্ধমান ঋণের খরচ, মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে সবদিক থেকেই অর্থনৈতিক পতনের আশঙ্কায় রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা দেশের তালিকা চমকপ্রদ। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। এরপরই রয়েছে মিশর ও ইকুয়েডর। তবে এ তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের।
আর্জেন্টিনা: যেসব দেশ ঝুঁকিতে রয়েছে তার মধ্যে আর্জেন্টিনাও রয়েছে। দেশটি যেকোনো সময় ঋণখেলাপিতে নাম লেখাতে পারে। দেশটির মুদ্রা পেসো এখন কালোবাজারে প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়ে কেনাবেচা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা কমেছে মারাত্মকভাবে। বন্ডের অবস্থাও খারাপ। ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিষেবার জন্য সরকারের কোনো উল্লেখযোগ্য ঋণও নেই।
ইউক্রেন: রাশিয়ার হামলার পর থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এখনো চলছে। দেশটিকে ২০ বিলিয়ন ঋণকে এখন পনর্গঠন করতে হবে। সেপ্টেম্বরে দেশটির এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার বন্ড পেমেন্ট বাকি থাকে। তারপরই মূলত সংকট সামনে আসে। তবে বিভিন্ন দেশের অর্থসহায়তা ও রিজার্ভের কারণে দেশটি বেঁচে যেতে পারে।
তিউনিশিয়া: আফ্রিকার অনেক দেশই আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে তিউনিশিয়া সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটির বাজেটের ১০ শতাংশই ঘাটতি। অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ।
তিউনিশিয়ান বন্ডের মূল্য বেড়েছে দুই হাজার ৮০০ পয়েন্টভিত্তিতে। প্রিমিয়াম বিনিয়োগকারীরা মার্কিন বন্ডের পরিবর্তে এটি কিনতে চায়। ইউক্রেন ও এল সালভাদরের পাশাপাশি তিউনিশিয়াও মরগান স্ট্যানলির সম্ভাব্য খেলাপিদের শীর্ষ তিনটি তালিকায় রয়েছে।
ঘানা: অনেক বেশি ঋণের কারণে ঘানার জিডিপির বিপরীতে ঋণের অনুপাত ৮৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরের দেশটির মুদ্রার মূল্য কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। দেশটির অর্ধেকের বেশি রাজস্ব ব্যয় হয় সুদ পরিশোধ করতে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
মিশর: মিশরের ঋণ টু জিডিপির অনুপাত প্রায় ৯৫ শতাংশ। দেশটি থেকে চলতি বছর ১১ বিলিয়ন ডলার বাইরে চলে গেছে। ফান্ড ফার্ম এফআইএম পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, মিশরকে ২০২৪ সালের তিন দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের বন্ডসহ পরবর্তী পাঁচ বছরে পরিশোধ করতে হবে একশ বিলিয়ন ডলার। এদিকে দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। চাওয়া হয়েছে আইএমএফের সহায়তা।
কেনিয়া: কেনিয়াও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটি মোট রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশ ব্যয় করে সুদ পরিশোধে। এর বন্ডগুলো প্রায় অর্ধেক মূল্য হারিয়েছে ও বর্তমানে এটির পুঁজিবাজারে কোনো প্রবেশাধিকার নেই।
পাকিস্তান: পাকিস্তান চলতি সপ্তাহে আইএমএফের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছে। তবে অগ্রগতি আরও সময়োপযোগী নাও হতে পারে। উচ্চ আমদানি মূল্য দেশটিকে অর্থপ্রদানের ভারসাম্য সংকটের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা পাঁচ সপ্তাহের আমদানির জন্য খুব কমই যথেষ্ট। পাকিস্তানি রুপি দুর্বল হয়ে রেকর্ড পরিমাণে নেমে এসেছে। নতুন সরকারকে এখন দ্রুত ব্যয় কমাতে হবে কারণ দেশটি মোট রাজস্বের ৪০ শতাংশ সুদ দিতে ব্যয় করে।
তাছাড়া ইথুপিয়া, এল সালভাদার, বেলারুশ, ইকুয়েডর ও নাইজেরিয়ারও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশগুলো যেকোনো সময় ঋণখেলাপিতে পরিণত হতে পারে। দেখা দিতে পারে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। কারণ এসব দেশের হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই। তবে এ তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।