যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক আশাবাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জেদ্দা সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সামিট। শনিবার কিং আবদুল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে এর সমাপ্তি হয়। এতে সৌদি আরব পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, দিনে এক কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উত্তোলনের কোনো রকম বাড়তি সক্ষমতা নেই তাদের। আধা ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপসাগরীয় দেশসমূহের (জিসিসি), মিশর, জর্ডান, ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করতে যৌথ প্রচেষ্টার বিষয়ে জোর দেয়া হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল হুসেইন, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাদিমি, বাহরাইনের বাদশা হামাদ আল খলিফা, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মেশাল আল আহমাদ আল জাবের আল সাবাহ, ওমানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী আসাদ বিন তারিক বিন তৈমুর আল সাইদ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ।
এই সম্মেলেনে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স বলেন, সৌদি আরব তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দিনে এক কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করেছে। এরপর আর উত্তোলন সক্ষমতা নেই তাদের। এ সময় তিনি জলবায়ুুর পরিবর্তনের বিষয়ে আলোকপাত করেন। আস্তে আস্তে টেকসই জ্বালানি উৎসের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষায়, আমরা আশা করি- যৌথ সহযোগিতার এক নতুন যুগ সৃষ্টি হবে এই সামিটে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গভীর হবে।
তাতে আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা হবে। তারা বিশ্বের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন সমৃদ্ধ হবে। এ সময় তিনি সহযোগিতা করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানান। আঞ্চলিক বিষয়ে তারা যেন হস্তক্ষেপ না করে সে আহ্বানও জানান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স।
তার বক্তব্যের সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ক্রাউন প্রিন্সের বক্তব্য এটা নিশ্চিত করেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় এবং সংযুক্ত একজন অংশীদার হিসেবেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৮ জন প্রেসিডেন্ট সফর করেছেন সৌদি আরবে। তার শেষ জন হলেন বাইডেন। বক্তব্যে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাইডেন বলেন, ৯/১১ এর পরে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট এই অঞ্চল সফর করছেন, যখন এখানে কোনো কমব্যাট সেনা নেই, এ অঞ্চলে কোনো কমব্যাট মিশন নেই। আস্থা গড়ে তুলতে এবং তার বাস্তব ফল পেতে আমাদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে কাজ করতে হবে। এ অঞ্চলকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এক্ষেত্রে জিসিসি হলো একটি উত্তম উদাহরণ।
বাইডেন আরও বলেন, আমাকে পরিষ্কার করে বলতে দিন। সেটা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে আরো সক্রিয়ভাবে অব্যাহতভাবে যুক্ত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব ক্রমশ প্রতিযোগিতাময় হয়ে উঠছে এবং আমরা ক্রমশই অধিক জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের সফলতার সঙ্গে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ যুক্ত।
সম্মেলনে ইরানের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মেশাল আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত করতে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) যে পথে অগ্রসর হচ্ছে তাতে ইরানকে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।