পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ২০টি প্রাদেশিক আসনের উপনির্বাচনে ১৫টিতেই জয়ী হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। গতকাল রোববার উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও সর্বশেষ বেসরকারি এবং প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী পিটিআই এগিয়ে থাকার খবর দিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
আজ সোমবার ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত ফলাফল এ রকম থাকলে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের ছেলে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রার্থী হামজা শাহবাজ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন পিটিআই সমর্থিত পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদে আজমের (পিএমএল-কিউ) প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ এলাহী।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাঞ্জাব উপনির্বাচনে ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে পিএমএল-এন। আরেকটি আসনে জিতেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির স্বতন্ত্র পার্টি সৈয়দ মোহাম্মদ রফিউদ্দীন বুখারী। এর মাধ্যমে পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে ইমরানের দল পিটিআই এবং শাহবাজ শরিফের দল পিএমএল-এন’র মধ্যে কার অবস্থান কতো শক্তিশালী তার পরিচয় পাওয়া যাবে। যার শুরুটা হয়েছিল সংসদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব থেকে। সে সময় শুধু ইমরানই নয়, বিরোধীরা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের বিরুদ্ধেও আস্থা রাখতে পারেনি।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে থাকার খবর পেয়ে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন পিটিআই কর্মীরা।
অনাস্থা আনায় উসমান বুজদার পদত্যাগ করলে পিটিআই মিত্র দল পিএমএল-কিউ‘র চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে এবং দলের অনুগত ওমর সরফরাজ চিমাকে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে এ পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়ান দলের ২৫ জন সংসদ সদস্য। তারা দলের নির্দেশ অমান্য করে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে পিএমএল-এন দলের হামজা শাহবাজকে ভোট দেন। এতে মারাত্মক ধাক্কা খায় পিটিআই। তাদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন নির্বাচিত এবং ৫ জন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।
দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের সংবিধানের ৬৩ (এ) ধারা অনুযায়ী পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করতে পিটিআই তখন নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) কাছে যায়। এরপর ১০ এপ্রিল ইমরান খানের পতন হয় ও ১১ এপ্রিল শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হামজা শাহবাজের শপথ গ্রহণে দেরি করে কেন্দ্রীয় সরকার। পরে ৩০ এপ্রিল লাহোর হাইকোর্টের আদেশের পরে তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
এর কয়েকদিন পরে ইসিপি ঘোষণা দেয়, পিটিআই’র ২৫ জন সংসদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার যাওয়ায় তাদের আসন শূন্য হয়েছে। এ ঘোষণার ফলে হামজা শাহবাজ ওই ২৫ জনের ভোট হারান, আর এর সঙ্গে হারিয়ে ফেলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা। পরে ইসিপি সংরক্ষিত ৫ আসনে পিটিআই থেকে নতুন ৫ জনকে পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ২০টি সাধারণ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ১৭ জুলাই নির্ধারণ করে।
পাঞ্জাবে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি
উপনির্বাচনে জয়ের পর পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে এক পোস্টে ‘সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট’ নির্বাচন কমিশনকে পরাজিত করার জন্য পাঞ্জাবের দলীয় কর্মী ও ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি সহযোগী দল পিএমএল-কিউ, মজলিস-ই-ওয়াহদাতুল মুসলিমিন (এমডব্লিউএম) এবং সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলকেও (এসআইসি) ধন্যবাদ জানান।
এদিকে উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল পেয়ে পিএমএল-এন’র সহ-সভাপতি মরিয়ম নওয়াজ পরাজয় মেনে নিয়েছেন। টুইটারে এক পোস্টে তিনি লিখেন, জয় এবং পরাজয় রাজনীতির অংশ। তিনি তার দলকে দুর্বলতা চিহ্নিত করে কঠোর পরিশ্রমের পরামর্শ দিয়েছেন।