নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বাইরে এখন আর কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নয় বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাকে সাড়া না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত ইসির কোনো ডাকে সাড়া দেবেন না তারা। তাদের একমাত্র লক্ষ্য সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।
জানা গেছে, রোববার (১৭ জুলাই) থেকে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে ইসি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এসব সংলাপে অংশ নেওয়া, আর না নেওয়া একই কথা। কারণ দেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হলে ইসি কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।
আগামী ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি। ইতোমধ্যে দলটিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনো ইসির কোনো দাওয়াতপত্র পাইনি।
দাওয়াত পেলে যাবেন কি-না জানতে চাইলে রিজভী বলেন, এ বিষয়েতো আমাদের দলের আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা বিএনপি করবে না।
তিনি বলেন, আমাদের মূল দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। সুতরাং এই ইসির সংলাপে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এর আগে ইভিএম যাচাই-বাছাই করতে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাতে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও বিএনপিসহ ১১টি রাজনৈতিক দল তাতে নেয়নি।
জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময়ে ২৮টি দল অংশ নিয়ে এর পক্ষে মতামত দিয়েছে আওয়ামী লীগসহ ৪টি দল। অন্যদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)সহ ২৪টি দলই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। এ অবস্থায় এবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ শুরু করেছে ইসি। এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপাসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৭ জুলাই চারটি দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং অবস্থান হচ্ছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। আলোচনা হবে শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। সরকার পদত্যাগ করলে, তবেই নতুন করে ইসি গঠন নিয়ে আলোচনায় বসবে বিএনপি। তখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ইসির অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার (১৭ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, দেশের মানুষ চায় না যে, এই ইসি অথবা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক। সে কারণেই আমরা এই ইসির কোনো সংলাপই বলেন, বা তাদের কোনো আলোচনা বলেন, বা ইভিএম বলেন, আমরা কোনো মন্তব্যই করছি না। কারণ এই ইসির অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, তা আমরা বিশ্বাসই করি না। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে, তাহলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।
‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের দায় বর্তমান ইসি নেবে না, তারা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করবে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের এরকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘লাভ নেই তো ভাই। ওনারা যতই কথা বলুক। ওনাদের কোনো ক্ষমতা নেই। মূল প্রশ্নটা হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী থাকেন তাহলে কোনো মতেই সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ’