কথিত আছে, রাজার অসুস্থ রানী কোন ডাক্তার, কবিরাজে ভালো হচ্ছিলেন না তখন এক হেকিম রানীকে প্রতিদিন একটি করে নতুন পুকুরে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ কারণে রাজা ৩৬৫টি পুকুর খনন করেছিলেন। আবার কেউ কেউ একে দুই সতিনের পুকুরও বলে থাকেন। পাশাপাশি দুইটি পুকুর। রাজার দুই স্ত্রী দুই পুকুরে গোসল করতেন তাই পরবর্তীতে তা দুই সতিনের পুকুর নামে পরিচিতি পায়।
আবার কেউ বলে রাজারা তার স্ত্রীদের ৩৬৫ দিন স্নান করার জন্য ৩৬৫টি পুকুর খনন করেছিলেন। পুকুরগুলোতে বেশ কিছু পাথর রয়েছে। কথিত আছে, এখানে পুকুরে পাথর একা চলাফেরা করত বলে পুকুরের নামকরণ করা হয়েছিল পাথর পকড়া।
নওগাঁর ধামুরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের চক-চান্দিরা গ্রামে প্রায় ৮ কিমি বিসৃত পাশাপাশি ৩৬৫টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। অষ্টম শতাব্দীর পাল বংশের কোনো এক রাজার রাজ্য ছিল এখানে। রাজপ্রসাদ, সৈন্য, রাজকার্য আর রানী নিয়ে খুব সুখেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ কী এক অসুখে পড়লেন রানী। রাজ্যের যত হেকিম-কবিরাজ সবাই এলেন রাজসভায়।
তারপর এক হেকিম জানালেন, রানীর এই অসুখ নিরাময় করতে হলে রাজাকে ৩৬৫টা পুকুর খনন করতে হবে এবং রানীকে প্রতিদিন একটি করে পুকুরে গোসল করতে হবে তবেই সুস্থ হবেন রানী। এরপর রাজা তার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য রাজ্যে ৩৬৫টি পুকুর খনন করেন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই রাজা, রাজ্য আর রাজপ্রসাদ। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে আজও রয়ে গেছে সেই কাহিনি। পুকুরের পাড়ে বন বিভাগের রয়েছে সবুজ বনায়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এখানকার ইতিহাস ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের জন্য উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাড় এবং চলাচলের মুল রাস্তা সংস্কার করা হলে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক এখানে আসতে পারবেন বলে মনে করেন এলাকাবাসীরা। চক-চান্দিরা গ্রামের বাসিন্দা মুরশেদুল আলম মুর্তুজা জানান- এটি ইতিহাসের বিরল একটি ঘটনা। কারণ, এখানে ৩৬৫ পুকুর একই সঙ্গে অবস্থিত। অষ্টম শতাব্দীর পাল বংশের কোনো এক রাজা এখানে বসবাস করতেন। তিনি তার স্ত্রীর সুস্থতার আশায় কোন এক হেকিমের পরামর্শে এই পুকুরগুলো খনন করেছিলেন। এই স্থানটিতে যাতায়াত ব্যবস্থা সংস্কার অতীব জরুরি। পুকুরগুলোর খনন করা হলে সেই সময়কার পুরাতন নিদর্শন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া চারদিকের সবুজ বনায়ন স্থানটিকে পর্যটকদের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
একসঙ্গে ৩৬৫ পুকুরের গল্প শুনে দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসেন পর্যটকরা। এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি এবং ঐতিহাসিক ঘটনা তাদের বেশ ভালো লাগে কিন্তু ঘটনাগুলোর সংস্পর্শে কোনোদিন আশা হয়নি। ৩৬৫ পুকুরের কথা শুনে তারা নিজ চোখে উপভোগ করতে এসেছেন।
ধামইরহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গনপতি রায় জানান- কথিত আছে পাল বংশের রাজারা তার স্ত্রীদের ৩৬৫ দিন স্নান করার জন্য ৩৬৫টি পুকুর খনন করেছিলেন। সেই পুকুরগুলো বর্তমান সময়ে এসেও চক-চান্দিরা গ্রামে দৃশ্যমান। এর ঐতিহাসিক ইতিহাস ও স্থানীয় পরিবেশ বেশ পর্যটন বান্ধব। মাটির রাস্তা সংস্কার করা হলে ও পুকুরগুলো খনন করলে ওখানে নৌকার ব্যবস্থা থাকতে পারে, বসার স্থান থাকতে পারে, বিভিন্ন রাইড থাকতে পারে, পুকুরগুলোর পাশের বিলে ঘাট করে দিলে সেখানেও পর্যটকরা নৌকা ভ্রমণ করতে পারে। এ সকল ব্যবস্থা নেওয়া হলে পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। তবে হাজার বছরের ইতিহাস হওয়ায় ৩৬৫ পুকুরে স্নান করে রাজার স্ত্রী সুস্থ হয়েছিলেন কি না এ তথ্য কোথাও লিপিবদ্ধ নাই। শুধু লোকমুখে এটি প্রচলিত হয়ে এসেছে।