চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এর জেরে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। অবশেষে জনরোষের মুখে পড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
এমতাবস্থায় ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সদস্যরা। এই নির্বাচনে নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে, যিনি এর আগে সংকটকালীন মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।
বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে ২২৫ ভোটের মধ্যে ২১৯ সদস্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে রনিল বিক্রমাসিংহে পান ১৩৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডুলাস আলাহাপেরুমা পেয়েছেন ৮২ ভোট। আর অনুর কুমার দিসানায়েক পেয়েছেন ৩ ভোট।
নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গোতাবায়া রাজাপাকসের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, রনিল বিক্রমাসিংহ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় দেশটির বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে। অথচ গত সপ্তাহে বিক্ষোভস্থলে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের দেশত্যাগ ও পদত্যাগের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন।
বুধবার সকালে কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী। এই মাসের শুরুতে বিক্ষোভকারীরা যেসব সরকারি ভবন দখল করেছিল, এই ভবন সেগুলোর একটি।
কিন্তু, দুপুরের কিছুক্ষণ পর পার্লামেন্টে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তিনি এখন বিক্ষোভ দমনের প্রস্তুতি নিতে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে এ খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাক্টিভিস্ট নুজলি হামিম বলেন, “আমরা হতাশ, কিন্তু অবাক নই। আমরা রাজনীতিকদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। তাদের উচিত এখন নিজেদের কৌশল যাচাই করা। কারণ, অনেকেই হতাশ।”
শ্রীলঙ্কার একজন পরিচিত অভিনেত্রী দামিথা আবেয়ারত্নে বলেন, “আমরা হেরে গেছি। গোটা দেশ হেরে গেছে।”
গত সপ্তাহে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পদত্যাগ করলে বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। ছয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বিক্রমাসিংহকে বিক্ষোভকারীরা রাজপাকসের পরিবারের প্রতি অনুগত হিসেবে মনে করেন।
আবেয়ারত্নে বলেন, রাজনীতিকরা তাদের ক্ষমতার জন্য লড়াই করছে, তারা জনগণের জন্য লড়াই করছে না। দুর্ভোগে থাকা মানুষদের জন্য তাদের কোনও অনুভূতি নেই।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন ক্যাথলিক যাজক ফাদার জীবন্ত পেইরিস বলেন, “আমরা একটি সংকটের ভুক্তভোগী, যা রাজাপাকসের শাসনে তৈরি হয়েছে। এই শাসন ব্যবস্থার অংশ বিক্রমাসিংহে।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের আন্দোলন হিসেবে আমরা রনিলের বিরুদ্ধে। আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব, আমরা থামব না।” সূত্র: এনডিটিভি