নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাঠে বড় বিতর্ক চলছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, সংলাপে আসা এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের বার্তা (মেসেজ) আমরা সরকারের কাছে পৌঁছে দেব। এটি সরকারই করতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের স্বার্থে সংবেদনশীল উপযুক্ত প্রস্তাব গ্রহণের মানসিকতা অবশ্যই যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের থাকবে।
বৃহস্পতিবার গণফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন সিইসি। সংলাপে গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান জাকির হুসেনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেন। চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাব সম্পর্কে সিইসি বলেন, এটি নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ প্রয়োজন। দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনার দরকার আছে। দলগুলোর উচিত এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরা। কারণ এটি সরকারই করতে পারবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে বা আছে। নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে কমিশনকে সহায়তা করতে হবে। সেটিই সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কমিশন সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের আলোকে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনে নির্বাহী সব কর্তৃপক্ষকে কমিশনের আদেশ ও নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনকালীন জনপ্রশাসনকে বিরাজনীতিকরণ করতে হবে। তাঁরা যেন নিরপেক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে প্রচুর সহিংসতা হচ্ছে। অকারণে গাড়ি-ঘোড়া, ঢাকঢোল নিয়ে প্রচারণা হচ্ছে। এসব কমিয়ে আনতে সবার সমবেত প্রয়াস দরকার। কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সংলাপে যেসব প্রস্তাব এসেছে, কিছু অভিন্ন। অস্ত্র শক্তি, অর্থের শক্তি, পেশিশক্তি- এগুলোর কিছু সংকট আছে। ভোটারদের অবাধ-নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের স্বার্থে এগুলো আমাদের ওভারকাম করতে হবে।
সিইসি বলেন, আসন্ন নির্বাচন বিতর্কিত হয়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রত্যাশাকে ভূলুণ্ঠিত করলে, কার কী দায় হবে, কেবল গন্তব্যই বলতে পারে। আমরা আমাদের সদিচ্ছা ব্যক্ত করছি। কোনো অপশক্তির চাপে মাথা নত না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সংসদ নির্বাচন একটি কঠিন ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সবার আন্তরিক ও সমন্বিত প্রয়াস থাকলে এমন কঠিন কর্মযজ্ঞ সাধন অসাধ্য নয়।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন হেলাফেলার জিনিস নয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন হওয়া উচিত। তবে কোনো দল নির্বাচনে না এলে ইসি বাধ্য করতে পারবে না। আমরা নির্বাচনে সব দলকে অংশ নিতে আহ্বান করছি এবং করে যাব। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর চেষ্টা থাকবে। পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণে দলগুলোর সহযোগিতা চাইব। নির্বাচন কমিশন একা করবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ম্যাজিস্ট্র্রেট এমনকি সেনাবাহিনীরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে। আমরা সে জন্য কাজ করব।
ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে সংশয়, আস্থাহীনতার বিষয়ে আমরা অবহিত। আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এর কিছু ভালো এবং মন্দ দিক রয়েছে, তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে সম্ভাবনা কতটা বস্তুনিষ্ঠ, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
৩৫০-৪৫০ আসনের প্রস্তাব :সংলাপে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য বিমান ও রেলওয়ের টিকিট, হাসপাতালের কেবিন ও কারাগারের ডিভিশনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার চেয়েছে গণফ্রন্ট। সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫০-৪৫০, প্রতিটি জেলা ও মহানগরী থেকে একজন করে সংরক্ষিত নারী আসন নিশ্চিত, রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার বিধান, এক মঞ্চে সব প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভা, ইসির পক্ষ থেকে দলগুলোকে আর্থিক অনুদানসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেয় দলটি।
বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা চায় বিজেপি :নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনসহ ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। দলের চেয়ারম্যান ডা. এম এ মুকিতের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল সংলাপে অংশ নিয়ে এই প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে হালনাগাদ ভোটার তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ, নির্বাচনের তিন মাস আগ থেকে এবং পরবর্তী কমপক্ষে এক মাস পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, এক বিভাগে এক দিন নির্বাচনের আয়োজন, ‘না’ ভোটের বিধান চালুর প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে। আগামী ৩১ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে এটি শেষ হওয়ার কথা। তবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না উল্লেখ করে এই সংলাপ বর্জন করেছে।