শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আইনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে হেরে গেলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ ইলাহি। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও ডেপুটি স্পিকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গেলেন তিনি। জিতে গেলেন শাসকদল পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রার্থী ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শরিফ। শনিবার শপথও নিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ৩৭১ সদস্যের পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় শুক্রবার ভোটাভুটিতে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ছেলে হামজা পেয়েছিলেন ১৭৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইলাহি পান ১৮৬ ভোট। কিন্তু আইনসভার ডেপুটি স্পিকার দোস্ত মাজারি পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ)-এর ১০ সদস্যের ভোট নাকচ করে দেন। ফলে ৩ ভোটে জয়ী হন হামজা।
মাজারির দাবি, প্রাক্তন সেনাশাসক পারভেজ মোশারফ প্রতিষ্ঠিত দল পিএমএল (কিউ)-এর ১০ অ্যাসেম্বলি সদস্যের সকলেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে পিপিপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তাই তাদের ভোট বাতিল করা হয়েছে। যদিও ইমরানের অভিযোগ, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্তে ‘বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ’ গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে আইন মানেননি ডেপুটি স্পিকার।
এই পরিস্থিতিতে পিটিআই সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দিয়ে শনিবার তিনি বলেছেন, “আমরা আদালতে ডেপুটি স্পিকারের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাব।”
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আইনসভার ২০টি আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ১৫টিতেই জয় পেয়েছিল ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ক্ষমতাসীন ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)’ বা পিএমএল-এন জেতে মাত্র চারটিতে! একটিতে জেতেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী।
এর ফলে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশে ইমরানের দলের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছিল। বর্তমানে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন হামজা। কিন্তু পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডেকে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের নির্দেশ দেয় লাহোর হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার পিএমএল(এন)-এর সহযোগী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা আসিফ আলি জারদারি বৈঠক করেন পিএমএল(কিউ) সভাপতি চৌধুরি সুজাত হুসেনের সঙ্গে। তারপরই সুজাত পাঞ্জাব আইনসভার দলীয় সদস্যদের হামজাকে ভোট দেওয়ার লিখিত নির্দেশ দেন।
কিন্তু পিএমএল (কিউ)-এর পাঞ্জাব পরিষদীয় দলের নেতা সাজিদ আহমেদ খান-সহ ১০ সদস্যের সকলেই বৈঠক করে ইলাহিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। পাঞ্জাবের আইনসভার ওই ২০টি আসন ছিল ইমরানের পিটিআই’র দখলে। কিন্তু গত মার্চে পার্লামেন্টের পাশাপাশি পাঞ্জাব আইনসভাতেও ইমরানের দলে ভাঙন ধরেছিল। বিদ্রোহীরা শরিফদের সঙ্গে হাত মেলানোয় মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারাতে হয় পিটিআই নেতা উসমান বুজদারকে। কুর্সিতে বসেন হামজা। কিন্তু এরপর ইমরানের আবেদন মেনে নিয়ে নির্বাচন কমিশন দলত্যাগী সদস্যদের বরখাস্ত করে উপনির্বাচন ঘোষণা করে। সূত্র: দ্য নিউজ, ডন, আরাই নিউজ, আউটলুক ইন্ডিয়া, জিওটিভি