ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ছয় লেনের এই ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের আদলে এবার ভাঙ্গা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। ১২৯ কিলোমিটারের এ সড়কটিও হবে ছয় লেন বিশিষ্ট। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ে-১ এর অংশ। সড়কটির বেনাপোল প্রান্তের অন্য পাশে ভারতের পেট্রোপোল অবস্থিত। ভারত থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি হয়। এছাড়া সড়কটি মোংলা পোর্টে যাতায়াতেও ব্যবহৃত হয়। ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে নির্মিত হলে বছরে বেনাপোল হয়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয় লেন বিশিষ্ট আধুনিক সড়ক নির্মাণ করা হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেই আদলে এটা নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এটা কোনো অংশে কম হবে না। আমরা দ্রুত কাজটি শুরু করবো। এজন্য অর্থায়ন খুঁজছি। আশা করছি ভারত এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। এছাড়া আমরা এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী খুঁজছি। পদ্মা সেতুর আরও সুফল পেতে হলে এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয় লেন বিশিষ্ট আধুনিক সড়ক নির্মাণ করা হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেই আদলে এটা নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এটা কোনো অংশে কম হবে না। আমরা দ্রুত কাজটি শুরু করবো। এজন্য অর্থায়ন খুঁজছি। আশা করছি ভারত এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। এছাড়া আমরা এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী খুঁজছি। পদ্মা সেতুর আরও সুফল পেতে হলে এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘সাব-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি (এসআরটিপিটিএফ-২)-শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ডিজাইনের আলোকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের রেট শিডিউল-২০১৯ অনুসারে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ছয় লেন বিশিষ্ট সড়কটির ভূমি অধিগ্রহণ বাদে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১১ হাজার ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৭০৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাকি ৯ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ঋণ খোঁজা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ভারত থেকে এই ঋণ মিলবে। ছয় লেন সড়কের বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ভারতীয় ক্রেডিট লাইন (এলওসি) এবং অন্যান্য উৎসকে প্রকল্প ঋণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পে ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। ১ দশমিক ৯২ লাখ ঘন মিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ ও ৮ হাজার ৬৯২ দশমিক ১৬ মিটার স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে থাকবে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ফুটওভার ব্রিজ, ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস। ১ হাজার ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সাইট ফ্যাসিলিটিজের কাজ করা হবে। প্রকল্পে ১৫৪ কোটি টাকার পরামর্শক সেবা ব্যয় ধরা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলছে, সড়কটি ছয় লেন হলে অনেক জেলা লাভবান হবে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ। এ অঞ্চল থেকে দ্রুত সময়ে পণ্য ও সেবা ঢাকায় আসবে। জেলাগুলোর সঙ্গে বেনাপোল হয়ে ভারত ও ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সময় কমে আসবে।