বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী প্রথম পাওয়া যায় আফ্রিকায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। খবর বিবিসির।
এ দিকে বিশ্বব্যাপী মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের মাত্রা বাড়ায় শনিবার (২৩ জুলাই) মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বব্যাপী জরুরি অব্স্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। বিশ্বে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
মাঙ্কিপক্স রোগটির নামের উৎপত্তি হয়েছে মাংকি (বাঁনর) থেকে। কারণ রোগটি প্রথমে একটি বাঁনরের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছিল। প্রাণঘাতী স্মলপক্স (গুটিবসন্ত) ভাইরাসের সঙ্গে এটির সংযোগ আছে। স্মলপক্স ভাইরাস ১৯৮০ এর দশকে নির্মূল করা সম্ভব হয়। তবে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস স্মলপক্স ভাইরাসের মতো এত প্রাণঘাতী না।
আফ্রিকা থেকে বিশ্বের কয়েকটি মহাদেশে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার ঘটেছে। এই তালিকা প্রকাশ সংবাদ সংস্থা এএফপির।
মানবদেহে ১৯৭০ সালে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। কঙ্গোর ৯ বছর বয়সী এক বালকের দেহে মেলে মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি। এরপর এটি জাতিগতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।
২০০৩ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্স পৌঁছে যায়। যা ছিল আফ্রিকার বাইরে প্রথম কেস। ধারণা করা হয় ঘানা থেকে আনা আক্রান্ত ইঁদুরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে এ ভাইরাস। ওই সময় একটি প্রেইরি ডগের দেহে পাওয়া যায় মাঙ্কিপক্স। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭টি মাঙ্কিপক্সের কেস রেকর্ড করা হয়। কিন্তু কেউ এতে মৃত্যু বরণ করেননি।
২০১৭: এ বছর আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে মাঙ্কিপক্স। ওই বছর ২০০ জনের দেহে এটি শনাক্ত হয়। মৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৩ ভাগ। এর পরের পাঁচ বছর বিশ্বব্যাপী বিক্ষিপ্ত বেশ কয়েকটি কেসের ব্যাপারে জানা যায়। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রে নাইজেরিয়া থেকে ফেরত ব্যক্তিদের দেহে মেলে এটি।
মে ২০২২: এ সময়টায় আফ্রিকার বাইরে অসংখ্য মাঙ্কিপক্সে শনাক্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। যারা কেউ আফ্রিকা যায়নি। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগ ছিলেন সমকামী পুরুষ। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার নতুন প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় ইউরোপ।
মে মাসের শেষে: এ সময়ে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধ করতে স্মলপক্সের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানায় স্মলপক্সের ভ্যাকসিন মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে কার্যকর। যারা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ডব্লিউএইচও করোনার ভ্যাকসিনের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
জুনের শুরুতে ডব্লিউএইচওর প্রধান জানান বিশ্বের ২৯টি দেশে এক হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।
জুলাই: এ মাসেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ডব্লিউএইচও।