শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন আরও শোচনীয় হচ্ছে। প্রতিদিনই চাকরি হারাচ্ছেন অসংখ্য লঙ্কান নাগরিক। অনাহার-অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। এমনকি অনেক নারীকেই বাধ্য হয়ে পতিতাবৃত্তিতে নামতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটিতে প্রতিদিনই যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া ডট কম।
স্বাভাবিক কর্মজীবন থেকে পতিতাবৃত্তিতে নামা এক নারী বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে আমি চাকরি হারাই। পরে দৈনিক বেতনে আরও একটি চাকরি নেই। কিন্তু যে বেতন পেতাম তা আমার সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। পরে একজন আমাকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। আমার মন সায় দিচ্ছিলো না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আর কোনো উপায়ও নেই আমার।
মাত্র ২১ বছর বয়সে পরিবারের হাল ধরেছিলেন এই নারী। টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন তিনি। চাকরি হারিয়ে এখন হয়েছেন যৌনকর্মী। রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান খদ্দেরের খোঁজে। দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে তার জীবন।
শুধু এই নারীই নয়, শ্রীলঙ্কার অনেক নারীর জীবনের গল্পটা এখন ঠিক এমনই। চরম আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। তাই দু’বেলা খাবার জোটাতে আর কোনো কাজ না পেয়ে পতিতাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির অনেক নারী।
শ্রীলঙ্কার এক এনজিও কর্মকর্তা আশিলা ডানডেনিয়া বলেন, সত্যি বলতে তাদের আর কোনো পথ নেই। এসব নারীরা অন্য কোনো কাজ খুঁজে পায় না। তাই বাধ্য হয়েই কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য তাদের এ পেশায় আসতে হচ্ছে। তারা তাদের পরিবার রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। একের পর এক সঙ্কটে ২২ মিলিয়ন বাসিন্দার দেশটিতে এখন অর্থনৈতিক ধস নেমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও তলানিতে ঠেকেছে। এরইমধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। রাজপথে নেমেছে জনতা। নতুনভাবে নির্বাচন হয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগ সহসাই শেষ হচ্ছে এমন আশার বাণী শোনাতে পারছেন না বিশ্লেষকরা।